মালদ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশিসহ ১১ জনের মৃত্যু

বলা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যার দিক দিয়ে মালদ্বীপে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এটি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2022, 07:12 AM
Updated : 10 Nov 2022, 07:12 AM

মালদ্বীপের রাজধানী মালের এক বাড়ির গ্যারেজে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশিসহ ১১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে দেশটির গণমাধ্যমে।

দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম আভাস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মালে শহরের মাফান্নু ও ইস্কান্দার মাগুর কাছে একটি বাসার নিচে ওই গ্যারেজে আগুন লাগার পর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোর হয়ে যায়।

মালদ্বীপের ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের কমান্ডার ইব্রাহিম রাশেদের বরাতে ‘আভাস’ লিখেছে, এ অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের আটজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশি নাগরিক। বাকি দুজনের জাতীয়তা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ এবং দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মারিয়া দিদি বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বলা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যার দিক দিয়ে মালদ্বীপে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এটি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিন তলা ওই বাড়িতে মূলত বিদেশিরা বসবাস করতেন, তারা ছিলেন শ্রীলঙ্কা, ভারত ও বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক। গ্যারেজে আগুন লাগার পর কয়েকজন তাদের ঘরে বা টয়লেটে আটকা পড়েছিলেন। 

মিহারু অনলাইন জানিয়েছে, ওই ভবনের বাসিন্দাদের রান্নার জন্য আলাদা আলাদা গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা হয়েছিল। অনেক সিলিন্ডার আগুনে বিস্ফোরিত হয়। ভবনটির পাশেই ছিল রাসায়নিকের ‍গুদাম।   

আর ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের ইব্রাহিম রাশেদ আভাসকে বলেছেন, “কীভাবে আগুন লাগল তা স্পষ্ট নয়। ওই গ্যারেজে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস ছিল, ফলে আগুন নেভানো আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠে। ভেতরে কত লোক ছিলেন তা স্পষ্ট নয়। মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে।”

ফায়ার সার্ভিস ও মালদ্বীপ রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ ওই ভবন থেকে ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। আহতদের মালদ্বীপের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ বলেন, “মালেতে কোনো কেমিকেল ওয়্যারহাউস থাকা উচিত নয়। গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপগুলো সরানো প্রয়োজন।”

‘বুঝতে পারছিলাম না কী হয়েছে’

মিহারু অনলাইন লিখেছে, অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় বীভৎস এক রাত পার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সামিনা (ছদ্মনাম)। ঘটনাস্থলের সামনের একটি বাড়িতেই তিনি থাকেন।

“আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। বিকট এক শব্দ শুনলাম। মনে হচ্ছিল কোনো কিছু বিস্ফোরণ হয়েছে।”

ভারতের উত্তরপ্রদেশের এই নারী পেশায় গৃহকর্মী। অন্যের বাড়িতে রান্না ও গৃহস্থালীর কাজ করেন। তার মত আরও ১২ জন নারীর সঙ্গে থাকেন সামিনা। এদের মধ্যে দুজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশি নারীও আছেন।

ঘটনার বর্ণনায় আরেকজন বলেন, “রাতে চারদিকে হঠাৎ বিশাল হলুদ আলো দেখতে পেলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটেছে।”

মিহারু অনলাইন জানিয়েছে, যখন ওই ব্যক্তি ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, সেসময় এক পুলিশ সদস্য তাকে থামিয়ে দেন। ঘটনাস্থল এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ওই পুলিশ সদস্য।

ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার

ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের কমান্ডার ইব্রাহিম রাশেদ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিহারুকে বলেন, ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় প্রতিটি ঘরেই রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার ছিল।

গ্যারেজের মালিক বলেছেন, গ্যারেজের ওপরের তলায় ২৮টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি প্রায় ৬০০ বর্গফুটের। সেখানে একটি বেড ও রান্নার জন্য একটি গ্যাস সিলিন্ডার রাখার জায়গা রয়েছে।

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

মালদ্বীপের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএম) ওই বাড়ির বেঁচে যাওয়া বাসিন্দাদের মাপ্পান স্টেডিয়ামের একটি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছে। ওই ঘটনায় ৩০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এনডিএম।