নেটোর প্রশংসা বাইডেনের, যুদ্ধের জন্য পশ্চিমকে দায় পুতিনের

রাশিয়ার ইউক্রেইন আক্রমণের বর্ষপূর্তি হচ্ছে দুই দিন পর, তার আগে সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2023, 04:44 AM
Updated : 22 Feb 2023, 04:44 AM

সদ্য ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ সফর করে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার ‘নগ্ন আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য পশ্চিমা গণতন্ত্রণের প্রশংসা করেছেন, অপরদিকে পশ্চিমের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।  

রাশিয়ার ইউক্রেইন আক্রমণের বর্ষপূর্তি হচ্ছে শুক্রবার, তার আগে সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে আর দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা বলেছেন পুতিন। 

মঙ্গলবার রুশ পার্লামেন্টে বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ন্যাশন’ ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

পশ্চিমারা নাৎসি জার্মানিকে সক্রিয় করে তুলেছিল আর এখন ইউক্রেইনকে ‘রাশিয়া-বিরোধী’ একটি নব্য-নাৎসি শাসনে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

এর কয়েকঘণ্টা পর পোল্যান্ড সফররত বাইডেন বলেছেন, স্বৈরাচারী শাসকরা শুধু একটি শব্দই বোঝে, সেটি হচ্ছে, “না, না, না!”

নেটো আগের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পুতিন ভেবেছিলেন বিশ্ব তার সঙ্গে একমত হবে, তিনি ভুল করেছিলেন।”

(রাশিয়ার আক্রমণের মুখেও) কিইভ মুক্ত, সোজা ও শক্ত হয়ে গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং ইউক্রেইনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন ব্যর্থ হবে না বলে প্রত্যয় জানিয়েছেন বাইডেন।

বাইডেনকে ওয়ারশর রাজকীয় দুর্গে স্বাগত জানিয়ে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা বলেন, কিইভ সফরের মাধ্যমে বাইডেন দেখিয়েছেন মুক্ত বিশ্ব কোনো কিছুকে ভয় করে না। নেটোর ভূমিকা হচ্ছে মুক্ত বিশ্বকে রক্ষা ও সমর্থন দেওয়া এবং ইউক্রেইন ‘অবশ্যই এই যুদ্ধে জয়ী হবে’।

পুতিনের ভাষণে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতি নিয়ে তেমন কিছু বলেননি এবং যুদ্ধ কীভাবে শেষ হতে পারে তার কোনো ইঙ্গিত দেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত ‘নিউ স্টার্ট’ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেন তিনি। যুদ্ধের দায়িত্বে নতুন স্থলভিত্তিক পদ্ধতি স্থাপন করেছেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

রাশিয়ার পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, “তারা এই যুদ্ধ শুরু করেছিল। আমরা তা থামানোর জন্য শক্তি প্রয়োগ করছি।” 

মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মস্কোয় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ইউক্রেইন থেকে ‘মার্কিন-নেটো সামরিক বাহিনী ও সরঞ্জাম’ প্রত্যাহার করার জন্য ওয়াশিংটনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে সতর্ক করে। 

অত্যন্ত জটিল এক নিরাপত্তা সতর্কতার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কিইভ যাওয়ার পরদিন ওয়ারশ সফরে যান তিনি।

বাইডেনের সফর ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ইউক্রেইনের জন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট দুদা। পাশপাশি ‘মুক্ত বিশ্ব’ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের পাশে আছেন এবং তাদের ভুলে যাননি, এটি এমন বার্তাও দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাইডেন তার বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ও যুদ্ধরত ইউক্রেইনীয়দেরই প্রশংসা করেছেন বেশি। পাশাপাশি তিনি মলদোভা ইইউপন্থি প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দুর প্রতিও তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।

বুধবার বাইডেনের নেটোর পূর্ব প্রান্তের নয়টি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর আগে নেটোর কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেছেন, “একজনের বিরুদ্ধে হামলা, সবার বিরুদ্ধে হামলা- নেটোর প্রত্যেক সদস্য এটি জানে এবং রাশিয়াও এটি জানে।”   

বাইডেনের পর মঙ্গলবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি কিইভ সফরে গিয়েছিলেন। ইউক্রেইনে এই প্রথম সফরে রাজধানীর পাশাপাশি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বুচা ও ইরপিনও পরিদর্শন করেন তিনি। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেইনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেলোনি।