সেনা পাঠানোর বর্ষপূর্তিতে ‘বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া’

তিন লাখ সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দিলেও নতুন আক্রমণের জন্য মস্কো প্রায় ৫ লাখ সেনা জড়ো করেছে, ধারণা ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 04:19 AM
Updated : 2 Feb 2023, 04:19 AM

রাশিয়া বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এবং তা ২৪ ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ।

মস্কো লাখ লাখ সেনা জড়ো করেছে এবং তারা গত বছরে আক্রমণের বর্ষপূর্তিতে ‘কিছু করার’ চেষ্টা করতে পারে, বলেছেন তিনি।

এবারের বড় আক্রমণ এমনকী ২৩ ফেব্রুয়ারিও শুরু হতে পারে, রাশিয়াসহ একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল, এমন অনেক দেশের সেনাবাহিনীই এদিনটিকে ‘পিতৃভূমি রক্ষার দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

নতুন আক্রমণের জন্য মস্কো প্রায় ৫ লাখ সেনা জড়ো করেছে, রেজনিকভ এমনটাই ধারণা করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশের ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিন লাখের মতো নতুন সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

কিন্তু নতুন নিয়োগ ও ইউক্রেইনে পাঠানো সেনার সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে অনুমান রেজনিকভের।

“আনুষ্ঠানিকভাবে তারা তিন লাখের কথা বলেছিল, কিন্তু আমরা যখন সীমান্তে দেখি, আমাদের মূল্যায়ন বলছে এই সংখ্যা অনেক বেশি,” ফ্রান্সের বিএফএম নেটওয়ার্ককে এমনটাই বলেন ইউক্রেইনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কে তুমুল লড়াই চললেও ইউক্রেইন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন পুনর্দখল করার পর থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রগুলো মোটামুটি স্থিতিশীলই আছে।

এ সময়ের মধ্যে রাশিয়া কেবল ছোট তবে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর সোলেদার দখল করতে পেরেছে; এর বাইরে কেউই বলার মতো কোনো সাফল্যই পায়নি।

কিন্তু বসন্তে এই পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তাদের অনুমান, আবহাওয়া অনুকূলে এলে রাশিয়া বড়সড় আক্রমণে নামবে, অন্যদিকে ইউক্রেইনও পাল্টা আক্রমণের পথ খুঁজবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারও সম্প্রতি বলেছে, মস্কো এ সময় ‘মারাত্মক কোনো পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথা ভাবতে পারে এবং পূর্বাঞ্চলে ‘বড় আক্রমণ’ শানাতে পারে।

সেক্ষেত্রে ইউক্রেইনের কমান্ডাররা ‘যুদ্ধক্ষেত্র স্থিতিশীল করে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে’ চাইবেন, বলেছেন রেজনিকভ।

“২০২৩ সালেই যে আমরা সামরিকভাবে বিজয় অর্জন করবো, সে ব্যাপারে আমার বিশ্বাস আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেইনের বাহিনী যে উদ্যম অর্জন করেছে, তা হারাতে পারি না আমরা,” বলেছেন তিনি।

ইউক্রেইনের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রান্সে গেছেন অতিরিক্ত এমজি-২০০ বিমান প্রতিরক্ষা রাডার কেনার চুক্তি করতে; এই রাডার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনসহ আকাশপথে আসা ‘টার্গেট’ শনাক্তে কিইভবাহিনীর সক্ষমতা ব্যাপক বাড়াবে বলেই ধারণা তার।

ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তার বাহিনীকে বসন্ত শেষ হওয়ার আগেই পুরো দনবাস দখলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চল কব্জা করার পরিকল্পনা ত্যাগ করেছেন, বলেছেন নেটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টল্টেনবার্গ।

“তারা সমানে নতুন অস্ত্র, গোলাবারুদ জোগাড় করছে, নিজেদের উৎপাদন বাড়াচ্ছে, সঙ্গে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর কাছ থেকেও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে।

“সবচেয়ে বড় কথা, প্রেসিডেন্ট পুতিন যে প্রতিবেশী দেশকে, ইউক্রেইনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্য বদলেছেন, তার কোনো সঙ্কেত দেখছি না আমরা। যতক্ষণ এমনটা থাকবে, ততক্ষণ দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের,” সোমবার এমনটাই বলেছেন তিনি।

ইউক্রেইনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়ার বলেছেন, দনবাসে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে তাদের সেনারা মরণপণ লড়াই করছেন।

রুশ সেনা এবং ওয়াগনার বাহিনী এখন কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত দখলে মনোনিবেশ করেছে।

মস্কো লিমান কব্জা করার কথাও ভাবছে বলে জানিয়েছেন মালিয়ার; ইউক্রেইনে সেনা পাঠানো রাশিয়া এই শহরটিকে রসদ সরবরাহের হাবে পরিণত করেছিল, অক্টোবরে শহরটি তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।

“রুশ সেনারা দোনেৎস্ক আর লুহানস্তের সীমানায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। ইউক্রেইনের ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষায় আমাদের সেনারা লড়ছে,” টেলিগ্রামে এমনটাই লিখেছেন তিনি।

বুধবার রাতে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও দনবাসে তার বাহিনীকে ‘কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে’ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন।

“পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে দখলদার বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে,” বলেছেন তিনি।