ভারতের ওই পাঠাগারে হাতে লেখা বহু প্রাচীন আড়াইশ পাণ্ডুলিপি এবং অনেক ক্যালিগ্রাফি ছিল।
Published : 23 Apr 2023, 09:24 PM
ছাই, গুলির ক্ষত বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেয়াল, পোড়া আসবাব আর পোড়া বইয়ের পাতা। ভারতে ১১৩ বছরের পুরানো একটি মাদ্রাসা পাঠাগারের বর্তমান চিত্র এটি। যেখানে একসময় সাড়ে চার হাজারের বেশি বই ছিল।
যেগুলোর মধ্যে ছিল প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এবং ইসলামের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থের দারুণ সুন্দর ক্যালিগ্রাফি।
বিবিসি জানায়, এই পাঠাগারটি ছিল ভারতের পূর্বের বিহার রাজ্যের শহর বিহার শরিফের বিখ্যাত ধর্মীয় স্কুল মাদ্রাসা আজিজিয়ার অংশ।
গত ৩১ মার্চ একদল উন্মত্ত দাঙ্গাবাজ ওই পাঠাগারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব রাম নবমীর দিন আগুন লাগার ওই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা বিবিসিকে বলেন, দাঙ্গাবাজ দলটির হাতে লাঠি, পাথর এবং পেট্রোল বোমা ছিল এবং পাঠাগারে হামলার আগে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় উত্তেজক স্লোগান দিয়েছিল।
ওইদিন শহরে আরো বেশ কিছু হামলার ঘটনা ঘটে। অনেকে আহত হন এবং যানবাহন ও দোকানপাট ভাংচুর করা হয়।
সাম্প্রদায়িক ওই দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে, যে ঘটনা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে।
পাঠাগারে হামলার বর্ণনায় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শতাধিক দাঙ্গাবাজের দলটি প্রথমে মাদ্রাসার তালা এবং সামনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে, তারপর ভাংচুর চালায়।
কেউ কেই শ্রেণীকক্ষ এবং পাঠাগারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে।
মাদ্রাসার একজন রাঁধুনী বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই আমি ধোঁয়ার গন্ধ পাই। যখন আমি দরজা খুলি তখন অফিস কক্ষের কাছে প্রচুর হট্টগোল দেখতে পাই। তারা ছাত্রাবাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ভয়ে আমি বিছানার তলায় লুকিয়ে পড়ি।”
আগুন পুরো পাঠাগারে ছড়িয়ে পড়ে। সব বই তখন ভেতরেই ছিল। এমনকি সেখানে হাতে লেখা আড়াইশ বই, ঐতিহাসিক বিভিন্ন নথি এবং প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আসবাব ছিল।
পাঠগারটি মূলত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতো। ওই মাদ্রাসায় প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন ছাত্রাবাসে থাকে।
কিন্তু ঘটনার দিন শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিল না। রমজান মাস শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে মাদ্রাসা ছুটি ছিল।
সোহরা ট্রাস্টের অধীনে ওই মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়। ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট এবং আলেম সৈয়দ সাইফুদ্দিন ফেরদৌসী বিবিসিকে বলেন, ‘‘আগুনে ভবন এবং আসবাবপত্রের যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো আবার ঠিক করে নেওয়া যাবে। কিন্তু জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়েছে গেছে।”
তিনি জানান, এর আগে ২০১৭ সালেও ওই ভবনে হামলা হয়েছিল। যে কারণে প্রায় এক বছর সেখানে পুলিশি পাহারা ছিল।
বিবি সোহরা নামে একজন মহীয়সী নারী তার স্বামী আব্দুল আজিজের স্মৃতি স্মারক হিসেবে ওই মাদ্রাসা নির্মাণ করেছিলেন।
১৮৯৬ সালে পাটনায় এই মাদ্রাসার যাত্রা শুরু হলেও পরে স্থানান্তর করে বিহার শরিফে আনা হয়।
মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বিবি সোহরা ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে তার সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন। যার মধ্যে ১৪ হাজার একর জমিও ছিল। তিনি তার ট্রাস্টের মাধ্যমে গরীব মানুষদের শিক্ষা ও অন্যান্য সহায়তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।
এই ট্রাস্টের অর্থ থেকে বিহার জুড়ে বহু স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছে।