ভূমিকম্প: তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যু ৩৪০০০ ছাড়াল

তুরস্কের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯৬০৫ জন হয়েছে। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2023, 03:32 AM
Updated : 13 Feb 2023, 03:32 AM

ব্যাপক বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ৩৪১৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

তুরস্কের জরুরি সমন্বয় কেন্দ্র এসএকেওএম জানিয়েছে, তুরস্কের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯৬০৫ জন হয়েছে। 

সিএনএন জানিয়েছে, তুরস্কের প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪৫৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদের মধ্যে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১৬০ জন হয়েছে বলে ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা এসএএনএ জানিয়েছে, সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশে মৃতের সংখ্যা ১৪১৪ জন।

গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্কের অন্তত ১০টি প্রদেশ ও দক্ষিণের প্রতিবেশী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। একইদিন পরে কাছাকাছি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে পরিস্থিতি অকল্পনীয় হয়ে দাঁড়ায়।

ভূমিকেম্পের পর থেকে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত প্রায় লাখের কাছে পৌঁছে গেছে। শুধু তুরস্কেই ছয় হাজারের ওপর ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের তাণ্ডব থেকে বেঁচে গিয়েও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

ভূমিকম্পের ছয় দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর রোববার তুরস্কে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১০ বছর বয়সী এক বালিকাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের বেশি কিছু সাফল্য উদ্ধারকর্মীদের উজ্জীবিত করে রেখেছে। ভূমিকম্পের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও জীবিতদের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাওয়া অব্যাহত রেখেছেন তারা।

তবে সময় যত পেরোচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ততই ফিকে হয়ে আসছে।

সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত আর কাউকে পাওয়ার আশা তারা করছে না জানিয়ে সেখানে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টেনেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটস। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের কারণে এই এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের প্রচেষ্টা বিঘ্নিত হচ্ছে। 

তুরস্কে ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোর নির্মাণকাজ নিয়ে ওঠা প্রশ্নের মুখে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ভবনগুলো ভেঙে পড়ার জন্য দায়ী সন্দেহে ১১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

ভবনগুলোর ঠিকাদারদেরসহ অন্তত ১২ জনকে এরই মধ্যে কাস্টডিতে নিয়েছে তুরস্কের পুলিশ। আরও অনেককেই গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু এলাকায় দেখা দেওয়া অস্থিরতা ভয়াবহ ভূমিকম্প পরবর্তী চলমান উদ্ধার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে বলে জানিয়েছে তিনটি উদ্ধারকারী দল।

বিবিসি জানিয়েছে, অনামা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাতকে উদ্ধৃত করে শনিবার জার্মান উদ্ধারকারী দল ও অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী তাদের তল্লাশি অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে।

শনিবার ‍তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম লুটপাটের অভিযোগে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা।

একাধিক বন্দুক, বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও ব্যাংকের কার্ড জব্দ করা হয়েছে, বলেছে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

“লোকজন দোকান ও গাড়ির বেড়া ও জানালা ভাঙচুর করছে,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন আনতাকিয়ায় ধসে পড়া একটি ভবনের ভেতর সহকর্মীর খোঁজ চালিয়ে যাওয়া ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ।

‘নিরাপত্তা হুমকির’ কারণে ইসরায়েলি তল্লাশি ও উদ্ধারকারী গোষ্ঠী ইউনাইটেড হাতজালাহ ছয় দিন কাজ করার পর তুরস্ক ছেড়ে যাচ্ছে বলে সিএনএন জানিয়েছে। 

আরও পড়ুন:

Also Read: তুরস্কে ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া ভবন নিয়ে তদন্ত, ১১৩ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

Also Read: তুরস্কে ভূমিকম্প: মায়ের লাশের সঙ্গে দু’দিন, যেভাবে বেঁচে ফিরল দুই বোন