রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ঢোকা জেনারেল লি শ্যাংফুকে শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়েছে চীন।
রোববার তারা নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে লি-র নাম ঘোষণা করে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চীনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার থাকে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের পলিটব্যুরো স্ট্যানি্ডং কমিটি ও প্রভাবশালী সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের হাতে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মূলত কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখভাল করেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন।
তারপরও অতীত ইতিহাসের কারণে লি-র এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়াকে খুব গুরুত্ব সহকারেই দেখা হচ্ছে, বলেছেন অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।
এমন এক সময়ে তার মেয়াদ শুরু হল, যখন ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে সামরিক সংলাপ ও যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যাপক তৎপর।
গত বছরের অগাস্টে তাইওয়ানে তৎকালীন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরকে কেন্দ্র করে বেইজিং ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পর এই সংলাপ ও যোগাযোগ অনেকটাই থমকে আছে।
এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার লি চীনের স্যাটেলাইট কর্মসূচিতেও কাজ করেছিলেন; প্রযুক্তি জগতে তার দক্ষতা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেধে দেওয়া পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) অন্তর্বর্তী লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০১৬ সালে লি-কে পিএলএ-র তখনকার নতুন স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার বানানো হয়। এই বাহিনীর কাজই ছিল চীনের মহাকাশ ও সাইবার যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়ানো।
এরপর লি-কে নিয়োগ দেওয়া হয় শি নেতৃত্বাধীন সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান হিসেবে।
২০১৭ সালে চীনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক রোসোবরনএক্সপোর্টের কাছ থেকে ১০টি এসইউ-৩৫ জঙ্গিবিমান এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা এস-৪০০ এর সরঞ্জাম কেনার কারণে পরিচালক হিসেবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন লি।
এ নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক জটিলতা বাড়াবে এবং চীনের সামরিক নেতৃত্বকে নানান ধরনের সুবিধা দেবে বলেই মনে করছেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
লি-র উত্থান প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেনেন্ট কর্নেল মার্টি মেইনারস বলেছেন, চীনের নেতৃত্ব পরিবর্তন বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারে না মার্কিন সামরিক বাহিনী।
“তবে আমরা স্পষ্টতই পিএলএ-র সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে চাই। যোগাযোগের উন্মুক্ত লাইন আমাদেরকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো ও দায়িত্বশীলভাবে প্রতিযোগিতায় সহায়তা করতে পারে,” বলেছেন তিনি।
রয়টার্স লিখেছে, সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের লি-র অন্তর্ভুক্তিই জানান দেয় তিনি শি-র কতটা ঘনিষ্ঠ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর ভেতর তার অবস্থান ক্রমাগত শক্তিশালী করেছেন।
অনেকে মনে করেন, লি-র আসল খাতির ঝ্যাং ইয়োজিয়ার সঙ্গে, যাকে শি-র ঘনিষ্ঠ সামরিক অনুচর মনে করা হয়। লি-র আগে ঝ্যাংই ছিলেন সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান।
অক্টোবরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কংগ্রেসে ঝ্যাং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ফার্স্ট ভাইস-চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি পান। ওই কংগ্রেসেই লি কমিশনের ৭ সদস্যবিশিষ্ট মূল পরিচালনা পর্ষদে ঢোকেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে লি-কে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে, এশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক, সিঙ্গাপুরে হওয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত শাংরি-লা সম্মেলনে যোগ দেওয়াসহ নানান অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে।