পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরান জুড়ে টানা চারসপ্তাহ ধরে সরকার বিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে তাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। নিহতদের মধ্যে ১৯ শিশুও রয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ বছরের মাশার জানাজার দিন থেকে এ বিক্ষোভের শুরু হয়। তার একদিন আগে মারা যান মাশা। মারা যাওয়ার আগে তিনদিন তিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন।
কুর্দি অধ্যুষিত ইরানি শহর সাকেজ থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরান গিয়েছিলেন মাশা। ঠিকঠাক মত হিজাব পরেননি অভিযোগ তুলে ১৩ সেপ্টম্বর ইরানের নীতি পুলিশ তাকে আটক করে।
মাশার পরিবারের দাবি, আটকের সময় পুলিশ তাদের লাঠি দিয়ে মাশার মাথায় মেরেছে এবং তাদের গাড়ির সঙ্গে মাশার মাথা ঠুকে দিয়েছে। তাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন মাশা। তার জ্ঞান আর ফেরেনি।
তবে পুলিশ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাশা মারা গেছেন।
মাশার জন্য ন্যায় বিচারের দাবিতে সাকেজ শহরে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তার আগুন এখন পুরো ইরান জুড়ে জ্বলছে। বিক্ষোভকারীরা দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পতনের দাবি করছেন।
শনিবার নরওয়ে ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ইরানজুড়ে চলমান বিক্ষোভে অন্তত ১৮৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত ১৯টি শিশুও রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারী মারা গেছেন সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে।”
ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এই বিক্ষোভের পেছনে তাদের চিরশত্রু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২০ সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও তারা জানিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার সকালেও ইরানের কয়েক ডজন নগরীতে বিক্ষোভ হয়েছে। যে বিক্ষোভে শত শত স্কুলছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন।
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল, লাঠি পেটা এমনকি কোথাও কোথাও সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শনিবারের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাফসানজান নগরীতে এক ব্যক্তি দাঙ্গা পুলিশের সামনে তার স্ত্রীকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন আর চিৎকার করে বলছেন, ‘‘আমার স্ত্রীকে আঘাত করবেন না, সে অন্তঃসত্ত্বা।”