দুই যুগ আগে সামরিক শাসনের অবসানের পর নাইজেরিয়ায় এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে।
এবার অনেক তরুণ ও প্রথমবার ভোটার হওয়াদের শনিবার ভোরের আগেই কেন্দ্রে দেখা যাওয়ায় ভোটদানের হার বেশি হবে বলেই মনে হচ্ছে।
অবশ্য কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হতে দেরি এবং কোথাও কোথাও ভোটবাক্স ছিনতাই ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলারও খবর পাওয়া গেছে, জানিয়েছে বিবিসি।
বেশ কয়েকটি দল ভোটে অনিয়মের অভিযোগও তুলেছেন, যা শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলকে বিতর্কিত করতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।
এবার দেশটির ৮ কোটি ৭০ লাখ নাগরিক ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন।
২৪ বছর আগে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নাইজেরিয়ার রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন এপিসি আর পিডিপি, এ দুটি দলেরই প্রভাব দেখা গেছে।
কিন্তু এবার লেবার পার্টির পিটার ওবি এই দুইদলের প্রার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তরুণদের অনেকেই ওবিকে সমর্থন করছেন।
ভোটগ্রহণ শেষে লাখ লাখ ভোটকেন্দ্রে গণনা চলছে, এরপর গণনাকৃত ফল পাঠানো হবে রাজধানী আবুজার নির্বাচনী সদরদপ্তরে।
চূড়ান্ত ফল মঙ্গলবারের আগে পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।
শনিবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে নাইজেরিয়ার প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা মাহমুদ ইয়াকুবু কিছু কিছু এলাকায় ভোটগ্রহণ শেষ করতে দেরি হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, ভোট স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, যারাই সেসময়ে ভোটের লাইনে ছিলেন, তাদের প্রত্যেককে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
দেশটির সর্ববৃহৎ শহর লাগোসের শহরতলী লেকির একটি কেন্দ্রের ভোটাররা ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের ৪ ঘণ্টা পর নির্বাচনী কর্মকর্তারা কেন্দ্রে আসায় উল্লাস প্রকাশ করেন।
“নাইজেরীয় হওয়ায় আপনাকে যে কোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যে কারণে আমি আমার পাওয়ার ব্যাংক ও পানির বোতল নিয়ে এসেছিলাম। কর্মকর্তারা না আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো, যেন আমি ভোটটা দিতে পারি,” বলেছেন প্রথমবার ভোটার হওয়া এডিথ।
আফ্রিকার দেশটিতে এদিন মোটাদাগে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হলেও লাগোসে কোথাও কোথাও ভোটের বাক্স ছিনতাই ও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
কিছু ভোটার তাদের ওপর হামলা এবং তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। কিছু কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট এক প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য ডেল্টা ও উত্তরের কাতসিনা রাজ্যে কোথাও কোথাও সশস্ত্র ব্যক্তিরা হামলা করেছে বলে জানান ইয়াকুবু। কাতসিনার কোনো কোনো এলাকায় ভোটার পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মেশিনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেসব জায়গায় নতুন মেশিন পাঠানো এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, বলেছেন এই প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা।
এতকিছুর পরও ভোটগ্রহণে বিঘ্ন ঘটায় তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণের রাজ্য বায়েলসার ১৪১টি কেন্দ্রের ভোট রোববার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বর্নোতে ইসলামী জঙ্গিরা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর গুলি ছুড়লে অনেকে আহত হয়, বলেছেন ইয়াকুবু।
বিবিসি লিখেছে, হাড্ডাহাড্ডি এই নির্বাচনে জিতে যিনিই প্রেসিডেন্ট হন না কেন, তাকে আফ্রিকার এ দেশটির ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি, ব্যাপক বেকারত্ব ও নিরাপত্তাজনিত সংকট মোকাবেলা করতে হবে। নাইজেরিয়ায় কেবল গতবছরই হাজার দশেক মানুষ নিহত হয়েছে।
শনিবার দেশটির ভোটাররা কেবল প্রেসিডেন্ট বেছে নিতেই ভোট দেননি, ১০৯ কেন্দ্রীয় সেনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের ৩৬০ সদস্য বেছে নিতেও ভোট দিয়েছেন। মার্চে দেশটিতে বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নর ঠিক করতে ভোট হওয়ার কথা।
এবারের ভোট নিয়ে তরুণদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ভোট দিতে যোগ্যদের এক তৃতীয়াংশেরই বয়স ৩৫ এর নিচে।
৬১ বছর বয়সী ওবি গত বছরের মে-তে লেবার পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই পালাক্রমে দুই দলের ক্ষমতায় থাকার রীতি বদলে দিতে চাইছেন।
তিনি এর আগে পিডিপি-তে ছিলেন। নাইজেরিয়াজুড়েই, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে তরুণদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।
ধনী এ ব্যবসায়ী ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আনামব্রা রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। তার সমর্থকরা বলছেন, প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র তিনিই সৎ। অন্যদিকে সমালোচকদের ভাষ্য, ওবিকে ভোট দিলে সেটি নষ্টই হবে, কারণ তার জেতার সম্ভাবনা খুবই কম।
পিডিপির প্রার্থী আতিকু আবুবাকারের বয়স ৭৬, প্রধান দলগুলোর মধ্যে তিনিই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলের একমাত্র প্রার্থী।
এর আগেও ৫ বার প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছিলেন তিনি, প্রত্যেকবারই হেরেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কাছের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবুবাকার অবশ্য এসব অস্বীকার করে আসছেন।
ক্ষমতাসীন এপিসির প্রার্থী ৭০ বছর বয়সী বোলা তিনুবু, তার বিরুদ্ধেও আবুবাকারের মতোই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে; তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলেও কানাঘুষা আছে। তবে এসব উড়িয়ে দিয়েছেন দুই দফা গভর্নরের দায়িত্বে থেকে লাগোসকে বদলে দেওয়ার কারিগর হিসেবে খ্যাত তিনুবু।
নাইজেরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, কেবল সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যাবেন না, তাকে দেশের ৩৬টির মধ্যে দুই তৃতীয়াংশে রাজ্যে পড়া ভোটের ২৫ শতাংশও ব্যাগে পুরতে হবে।
তা না হলে, ২১ দিনের মধ্যে হবে রানঅফ ভোট। নাইজেরিয়ায় এর আগে কখনোই রানঅফ ভোট হয়নি।