কানাডার এক এমপিকে ভয় দেখানোর চেষ্টার অভিযোগে অটোয়া চীনের এক কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নিলে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বেইজিংও সাংহাইয়ে কানাডার কনসালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
সোমবার কানাডা চীনা কূটনীতিক ঝাও উইকে ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে তাকে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেয়।
এর কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার চীন সাংহাই কনসুলেটে নিয়োজিত কানাডার কূটনীতিক জেনিফার লিন লালন্ডের বহিষ্কারাদেশ জারি করে।
“আরও প্রতিক্রিয়া দেখানোর অধিকার চীনের আছে,” বেইজিংয়ের বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দুই কূটনীতিকই দেশ ছাড়তে ৫ দিন করে সময় পেয়েছেন।
কানাডায় চীনা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদনকে ঘিরে অটোয়া ও বেইজিংয়ের মধ্যে যে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়েছে, পাল্টাপাল্টি এই কূটনীতিক বহিষ্কার তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
কানাডার ভাষ্য, চীনের মানবাধিকার লংঘন নিয়ে অভিযোগ আনার পর বেইজিং কানাডার বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা মাইকেল চং ও হংকংয়ে তার আত্মীয়স্বজনদের ‘টার্গেট’ করা শুরু করে।
বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে কানাডা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অন্য কারও হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না বলে ফের জানায়।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার কানাডার পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী মেলানি জলি চীনা কূটনীতিক ঝাওকে ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেন। এই লাতিন কথার অর্থ ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’।
অটোয়ার এই পদক্ষেপকে ‘নীতিহীন’ অ্যাথ্যা দিয়ে লালন্ডের জন্যও একই বিধানের ঘোষণা দেয় তারা, বলে ‘এটা হচ্ছে পাল্টা ব্যবস্থা’।
সম্প্রতি কানাডার সংবাদমাধ্যম গ্লোব অ্যান্ড মেইলে দেশটির একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যাতে বলা হয়, সংখ্যালঘু উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর চীনের ‘নির্যাতন’ নিয়ে সমালোচনামুখর ৫১ বছর বয়সী চংয়ের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় প্রক্রিয়ায় চীনা কূটনীতিক ঝাও জড়িত ছিলেন।
চংয়ের ‘চীন-বিরোধী অবস্থান’ মোকাবেলায় চীন হংকংয়ে থাকা চংয়ের স্বজনদের বিস্তারিতও জানতে চেয়েছিল বলে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার অনুমান, বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
চং ২০২১ সালে পার্লামেন্টে উইঘুরে চীনের আচরণকে ‘গণহত্যা’ অ্যাখ্যা দিতে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন; উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ চীন শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে, ওই প্রস্তাব দেওয়ার কিছু সময় পর তারা চংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেয়।
সোমবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলি বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ কানাডা বরদাশত করবে না।“
নানাদিক বিবেচনায় নিয়েই ঝাওকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
“এই পদক্ষেপের দৃঢ় প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে চীন এবং কানাডার কাছে কড়া প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে,” মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায় চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চং ও তার পরিবারকে বেইজিং ‘টার্গেট করেছে’ এমন বক্তব্যের মাধ্যমে কানাডা ‘অপবাদ দিচ্ছে ও মানহানি করছে’ বলে কয়েকদিন আগেও চীন অভিযোগ করেছিল।