ইরানে বিশৃঙ্খলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলকে দুষলেন খামেনি

নীতি পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে ইরান জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 04:50 PM
Updated : 3 Oct 2022, 04:50 PM

নীতি পুলিশের হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে ইরান জুড়ে যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ইন্ধন থাকার অভিযোগ তুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাশা আমিনি নামে ২২ বছরের ওই তরুণী আটক হওয়ার পর ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে আমিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে তেহরানে গিয়েছিলেন। পুলিশের দাবি, মাশা হঠাৎই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

হিজাব ঠিকমত পরেননি অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করেছিল। মাশার পরিবারের দাবি, পুলিশ আটকের সময় তার মাথায় তাদের লাঠি দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে এবং পুলিশের গাড়ির সঙ্গে তার মাথা ঠুকে দেয়। তারপর মাশা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন কোমায় থাকার পর মাশা মারা যান।

যার প্রতিবাদে প্রথমে কুর্দি অধ্যুষিত শহরগুলোতে এবং পরে পুরো দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারীদের এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত।

এই বিক্ষোভ নিয়ে সোমবারই প্রথম মুখ খুললেন খামেনি। তিনি বলেন, এ ‘দাঙ্গা’ ইরানের চিরশত্রু এবং তাদের মিত্রদের ‘রচিত’। বিক্ষোভে পবিত্র কোরআন পোড়ানো হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে ভবিষ্যত বিক্ষোভ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।

খামেনির এক দশকের শাসনামলে ইরানে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে।

সোমবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ক‌্যাডেটদের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে খামেনি বলেন, ‘‘মাশার মৃত্যু আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।

‘‘কিন্তু এখানে যেটা স্বাভাবিক নয় সেটা হচ্ছে কিছু মানুষ কোনও প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই সড়কগুলোকে বিপজ্জনক করে তুলেছে, কোরআন পুড়িয়েছে, পার্দানশীন নারীদের মাথা থেকে হিজাব খুলে নিয়েছে এবং মসজিদ ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।”

তিনি অবশ্য তার বক্তৃতায় নির্দিষ্ট করে কোনও ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি।

ইরানের সর্বোচ্চ এই নেতা আরও বলেন, বিদেশি শক্তি এই ‘দাঙ্গার’ পরিকল্পনা করেছে। কারণ ইরান ‘সব ক্ষেত্রে শক্তি অর্জন করছে’ এটি তারা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘‘আমি স্পষ্টভাবে বলছি, এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতা আমেরিকা এবং দখলদার, মিথ্যাবাদী ইহুদি শাসক (ইসরায়েল), তাদের পালা এজেন্ট এবং বিদেশে অবস্থান করা কিছু বিশ্বাসঘাতক ইরানিদের সহায়তায় রচিত হয়েছে।”

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি নিজের পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভের সময় তাদের ‘অন্যায়’ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩৩ জন নিহত হয়েছে বলে রোববার দাবি করেছে নরওয়ে ভিত্তিক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস। তাদের মধ্যে ৪১ বিক্ষোভকারীও রয়েছেন যারা আদিবাসী বালুচ সম্প্রদায়ের। গত শুক্রবার জাহেনদানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তারা নিহত হন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম অবশ্য বলছে, বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।