বিবিসি-র কাছে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় উঠে এসেছে সেতু ভেঙে পড়ার সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা।
Published : 31 Oct 2022, 08:32 PM
ভারতের গুজরাট রাজ্যে ব্রিটিশ আমলের একটি ঝুলন্ত সেতু ধসের ঘটনায় ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলেই জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
দুর্ঘটনায় কেউ বেঁচে ফিরে এসেছে। কেউবা হারিয়েছে বাবা-মাকে, আবার কেউ হারিয়েছে ভাই, বোন কিংবাবন্ধু-বান্ধবকে। দুর্ঘটনার পর তারা খুঁজে ফিরছে হারানো এই প্রিয়জনদের।
কোথায় যাবে, কাকে বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না তারা।এর মধ্যেই কয়েকজনের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেতু ভেঙে পড়ার সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা। বিবিসি’র কাছে এই প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা।
‘আমি বেঁচে গেছি, কিন্তু আমার বোন এখনও নিখোঁজ’
দুর্ঘটনার সময় সেতুতে ছিলেন এমন একজন তরুণ বিবিসি গুজরাটিকে বলেছেন, তিনি তার ছয় বছরের বোনকে নিয়ে সেতুতে গিয়েছিলেন। সেতু ভেঙে পড়ার পর বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘটনার বর্ণনায় এই তরুণ বলেন, “আমরা সেতুতে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে শত শত মানুষ ছিল। আমি প্রথম এই সেতুতে উঠেছিলাম। আমি আর আমার বোন মিলে মোবাইলে ছবি তুলছিলাম। আর তখনই হঠাৎ সেতু ভেঙে পড়ে।
“আমি বোনকে নিয়ে পানিতে পড়ে যাই। আমি বেঁচে গেছি। কিন্তু আমার বোন এখনও নিখোঁজ।”
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “সেই রোববার সন্ধ্যা থেকে তাকে খুঁজছি। সরকারি হাসপাতালে গিয়েছি, সব জায়গাতেই খোঁজ করেছি। কিন্তু আমার বোনকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
‘আমি ঠিকমত জবাব পাচ্ছি না’
জয়েশভাই নামের অরেকজন বিবিসি গুজরাটিকে জানান, তার বন্ধু রাজেশ এখনও নিখোঁজ। সোমবার সকাল পর্যন্ত তার খোঁজ করেও কোনও হদিস মেলেনি।
তিনি বলেন, “আমি হাসপাতালে তার (রাজেশ) খোঁজ করেছি। কর্মকর্তাদেরকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু সব জায়গা থেকে একটি উত্তরই পেয়েছি। আর তা হচ্ছে, চেষ্টা চলছে।”
“রাজেশকে খুঁজে পেতে কী করা হচ্ছে সে সম্পর্কে ঠিকমত কোনও জবাব কারও কাছ থেকেই আমি পাইনি। তার পরিবার হতাশ। তারপরও রাজেশের হয়ত কিছু হয়নি ভেবে তারা আশায় আছে।”
মেরামতির পরে সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার আগে ভাল করে পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার ছিল বলেই মনে করেন জয়েশভাই।
‘ভেঙে পড়া সেতুতে ঝুলছিল ৫০-৬০ জন’
সেতু ভেঙে পড়ার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রমেশভাই জিলারিয়া। পানি থেকে মৃতদেহ টেনে তোলার কাজে সহায়তা করেছেন বলে জানান তিনি।
বিবিসি গুজরাটিকে জিলারিয়া বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি দড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে পৌঁছে দেখি ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ ভেঙে পড়া সেতু ধরে ঝুলছে।”
নদীতে যারা পড়ে গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে প্রায় ১৫ জনের দেহ তিনি ও অন্যান্যরা মিলে দড়ি দিয়ে টেনে পাড়ে তুলেছেন বলে জানান জিলারিয়া। এর মধ্যে তিনজনই ছোট শিশু ছিল, বলেন তিনি।
‘বিকট শব্দে সেতু ভেঙে পড়েছিল’
দুর্ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সুভাসভাই বিবিসি গুজরাটিকে বলেন, “কাজ শেষের পর আমি আর আমার বন্ধুরা সেতুর কাছেই বসে ছিলাম। তখনই সেতু ভেঙে পড়ার বিকট শব্দ হয়।
“আমরা দৌড়ে সেখানে গিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করতে শুরু করি। কিছু মানুষ সাঁতার কাটছিল। কিন্তু কিছু মানুষ ডুবে যাচ্ছিল।
“আমরা প্রথমে ছোট শিশুদের টেনে তুলতে চেষ্টা করি। তারপর একটি পাইপ দিয়ে বড়দেরও উদ্ধারের চেষ্টা করি।”
“আমরা ৮-৯ জন মানুষকে টেনে তুলতে পেরেছি। আর দুটো মৃতদেহ উদ্ধার করেছি।”
ধসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯:
সেতু ধসের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন গ্রেপ্তার হওয়ার খবর জানিয়েছে ভারতীয় পত্রিকাগুলো। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা মোরবি সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। ফিটনেস সার্টিফিকেট না দিয়েই সেতু খুলে দেওয়া হল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
‘ওরেভা কোম্পানি’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। তারা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই তড়িঘড়ি সেতুটি খুলে দেয় বলে অভিযোগ আছে।
দীপাবলির উৎসবের সময়ে বাড়তি টিকিট বিক্রির আশায় এমনটি করা হয়েছে কিনা ঘুরেফিরে আসছে সেই প্রশ্ন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা অনুযায়ী, রোববার মোরবি সেতুতে মানুষেরভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টাই ছিল না। এমনকী ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েকজন যুবক সেতু দোলালেও কেউ ভ্রুক্ষেপ করেনি বলে শোনা যাচ্ছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি কাউন্টারে গিয়ে অভিযোগ করেও কোনও ফল হয়নি। গোটা বিষয়টিই পুলিশ খতিয়ে দেখছে।