যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এক নির্বাহী আদেশে প্রায় ৫০ বছর পুরোনো দুর্নীতি-বিরোধী একটি আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছেন।
Published : 12 Feb 2025, 08:04 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ‘ফরেইন করাপ্ট প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট’ (এফসিপিএ) নামের দুর্নীতি-বিরোধী আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছেন। এই আইনের আওতায় বিদেশি কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত আমেরিকানদের বিচার করা যেত।
কিন্তু ট্রাম্পের আদেশে প্রায় অর্ধশতাব্দী পুরনো এই আইনের প্রয়োগ থমকে গিয়ে স্থগিত হয়ে যাবে বিচারপ্রক্রিয়া। এতদিন এই আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে নথিভুক্ত সংস্থাগুলোর ব্যবসা বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে বিদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
ঘুষ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে কোটি কোটি ডলার জরিমানা করার বিধান ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও পদক্ষেপ নিতে পারত।
ট্রাম্প সোমবার এই আইন প্রয়োগ স্থগিতের আদেশ সই করার কারণ ব্যাখ্যায় বলেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে। হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনটির অতিরিক্ত কঠোর প্রয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়ছে।
এর আগে ট্রাম্প ‘ফরেইন করাপ্ট প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট’ (এফসিপিএ)-কে 'ভয়ঙ্কর আইন' আখ্যা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, এর ফলে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী উপহাসের পাত্র হয়ে উঠেছে।
বিবিসি জানায়, নতুন নির্দেশনায় ট্রাম্প বিচার বিভাগকে আইনের পূর্ববর্তী ও বর্তমান প্রয়োগ পুনঃপর্যালোচনা করা এবং এফসিপিএ প্রয়োগের জন্য নতুন নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
দুর্নীতি-বিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইকে দুর্বল করতে পারে এবং এ প্রচেষ্টা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।
তবে ট্রাম্প বলেছেন, আইনটি প্রয়োগ করা হলে বিদেশে নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এবং মার্কিন সম্পদের অপচয় হবে। তিনি বিদেশে মার্কিনিদের ব্যবসায় ‘অতিরিক্ত বাধাগুলো’ দূর করতে চান বলে জানিয়েছেন।
দুর্নীতিবিরোধী এফসিপিএ আইনের আওতায় এর আগে বড় কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকস ও গ্লেনকোরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ২০২০ সালে গোল্ডম্যান স্যাকস মালয়েশিয়ার ১এমবিডি দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে তাদের ভূমিকা থাকার বিষয়ে তদন্ত বন্ধে প্রায় ৩শ’ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছিল।
গোল্ডম্যান স্যাকসের মালয়েশিয়ান শাখা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে স্বীকার করেছিল যে, তারা মালয়েশিয়ার সরকারি তহবিল থেকে ব্যবসার সুযোগ পেতে ১শ’ কোটি ডলারের বেশি ঘুষ দিয়েছিল।
২০২২ সালে, সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক খনি কোম্পানি গ্লেনকোর জানায়, দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য তারা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোকে ১৮ কোটি ডলার দেবে।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বে গ্লেনকোরের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ আসে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন দুর্নীতিবিরোধী আইনের অধীনে ২৬টি মামলা দায়ের করে। বছরের শেষ নাগাদ অন্তত ৩১টি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল।
ওদিকে, ট্রাম্প আদেশে স্বাক্ষর করার একই দিনে, মার্কিন বিচার বিভাগ ফেডারেল কৌঁসুলিদের নির্দেশ দেয় নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করতে।
অভিযোগ ছিল, তিনি মেয়র হিসেবে তার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ প্রচার তহবিল ও উপহার গ্রহণ করেছেন, তবে তিনি কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি।
হোয়াইট হাউজ বলেছে, নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ 'অবৈধ অভিবাসন ও সহিংস অপরাধ' মোকাবেলায় তার ক্ষমতাকে 'সীমাবদ্ধ' করেছে।
এছাড়া, ট্রাম্প ইলিনয়ের সাবেক গভর্নর রড ব্লাগোজেভিচকেও ক্ষমা করেছেন। ব্লাগোজেভিচ, যিনি একজন ডেমোক্র্যাট, দুর্নীতির অভিযোগে আট বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্লাগোজেভিচের শাস্তি কমিয়ে দিয়েছিলেন।