গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও হামাসের গণমাধ্যম জানিয়েছে, পুরো ছিটমহলজুড়ে ইসরায়েলি বোমা হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
Published : 20 Oct 2024, 11:07 AM
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর রকেট ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানার ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি বাড়ি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার পর বৈরুত ও গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েল জানিয়েছে, শনিবার তারা বৈরুতের দক্ষিণাংশে হিজবুল্লাহর অস্ত্র গুদামগুলোতে আঘাত হেনেছে।
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর সেসারিয়ায় নেতানিয়াহুর যে বাড়িটি লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে সাধারণত সেখানে ছুটি কাটান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হামলার সময় নেতানিয়াহু ওই বাড়িতে ছিলেন না। আর তার বাড়িতে ড্রোনটি সরাসরি আঘাত হেনেছে কি না, তাও পরিষ্কার হয়নি।
কিন্তু নেতানিয়াহু এ ঘটনাকে ‘ইরানের ছায়া বাহিনী হিজবুল্লাহর’ দ্বারা ঘটানো হত্যা প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করে এটিকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন।
শনিবার ইসরায়েলের স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত দেশটির উত্তরাঞ্চলে অন্তত ১৮০টি রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এতে অন্তত একজন নিহত ও আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেছে।
চলতি মাসের প্রথমদিকে ইরানের চালানো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল, তার মধ্যেই এসব ঘটনা ঘটলো।
গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও হামাসের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এদিন পুরো ছিটমহলজুড়ে ইসরায়েলি বোমা হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী তিনটি হাসপাতালের চারপাশে অবরোধও জোরদার করেছে।
বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল যে এ ঘটনা হয়তো অঞ্চলটিকে একটি যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু ইসরায়েল ও তাদের শত্রু হামাস, হিজবুল্লাহর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারে সেই আশা মিলিয়ে গেছে।
কর্মকর্তারা, কূটনীতিকরা ও অন্যান্য সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছেন, কিছুদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন, তার আগেই ব্যাপক সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে নিজের সীমান্ত সুরক্ষিত করে নিতে চাইছে ইসরায়েল আর প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলো যেন ফের সংগঠিত হতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে চাইছে।
শনিবার ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজার দক্ষিণাঞ্চলে লিফটেল ফেলেছে। লিফলেটে সিনওয়ারের একটি ছবি ও ‘হামাস আর গাজা শাসন করবে না’ এই বার্তা লেখা ছিল।
গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও হামাসের গণমাধ্যম জানিয়েছে, পরে রাতে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ার একটি বহুতল ভবনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৩ জন নিহত ও আরও বহু আহত হন।
এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ইসরায়েলি বাহিনী খতিয়ে দেখছে। দেশটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হয়েছে এবং তারা যেসব তথ্য পেয়েছেন তার সঙ্গে এগুলো খাপ খাচ্ছে না।
এদিন বৈরুতের দক্ষিণাংশের শহরতলীগুলোর কয়েকটি অংশে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। সন্ধ্যার দিকে নগরীর ওই অংশের আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডুলি ভেসে থাকতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, “হিজবুল্লাহর একটি গোয়েন্দা সদরদপ্তরের কমান্ড সেন্টার ও কয়েকটি অস্ত্র গুদাম লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়েছে।”
ওই শহরতলীগুলোর চারটি পৃথক এলাকা থেকে লোকজনকে ৫০০ মিটার দূরে চলে যাওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী, কিন্তু তারা অন্য এলাকাগুলোতেও হামলা চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বৈরুতের দক্ষিণাংশের এই শহরতলীগুলোতে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন দপ্তর ও ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো অবস্থিত। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের টানা ব্যাপক হামলার কারণে এক সময় ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকাগুলো থেকে প্রায় লাখো বাসিন্দা পালিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন: