মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেতে দেখছে।
Published : 27 Jun 2024, 03:41 PM
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদন ভারতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর, বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ওপর সহিংস হামলা, শারীরিক লাঞ্ছনা ও তাদের প্রার্থনাগৃহ ধ্বংসের উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বুধবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের সমপদাধিকারী ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে ধারাবাহিকভাবে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন’।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেতে দেখছে; তিনি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সম্প্রতি টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের ক্ষমতায় এসেছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, "ভারতে ধর্ম পরিবর্তন রোধের আইন, ঘৃণমূলক মন্তব্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা গৃহ ও বাসাবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি।“
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং চীনকে মোকাবেলায় ওয়াশিংটনের কাছে নয়াদিল্লির গুরুত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত ভারতের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে সংযত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে কয়েক ডজন ঘটনা তালিকবদ্ধ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মুম্বাইয়ের কাছে একটি ট্রেনে একজন রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্তৃক তার এক ঊর্ধ্বতন সহকর্মী ও তিন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্র জানিয়েছে, এ ঘটনার সন্দেহভাজন কারাগারে আছেন এবং বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত চলমান আছে।
প্রতিবেদনে মুসলিম পুরুষরা গরু জবাইয়ের অংশ নিয়েছে বা গরুর মাংস বিক্রি করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ওয়াশিংটনের ভারতীয় দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারত সরকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা ভারতের সরকারের এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত করে মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণামূলক বক্তব্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, নাগরিকত্ব আইন (যাকে জাতিসংঘ ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ বলে অভিহিত করেছে) এবং অবৈধ নির্মাণ অপসারণের নামে মুসলিমদের সম্পত্তি ধ্বংস করার দিকে আঙুল তুলেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত বছরের মে মাস থেকে সংখ্যালঘু কুকি, যারা মূলত খ্রিস্টান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মূলত হিন্দু মেইতেই নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হওয়া সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সহিংসতায় মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের উপাসনালয় ধ্বংস করা হয়েছে। কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে গত বছর মে মাস থেকে চলতে থাকা সংঘর্ষের বিষয়টি ঘটনাক্রমে বর্ণনা করা হয়।
ওই রাজ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে, নিয়মিত কারফিউ জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ রেখেও যে সহিংসতা বন্ধ করা যায় নি, তা লিখেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টও যে সহিংসতা বন্ধের চেষ্টায় সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করেছে, সেটাও বলা হয়েছে মার্কিন প্রতিবেদনে।
স্থানীয় ট্রাইবাল লিডার্স ফোরামের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫০টিরও বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ মুসলমান এবং ২ শতাংশের বেশি খ্রিস্টান।
প্রতিবেদনে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব আইন বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।