এক যুগ পর দক্ষিণ কোরিয়া সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী

অতীতের বিরোধ ভুলে সিউল সফর করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।

রয়টার্স
Published : 7 May 2023, 01:32 PM
Updated : 7 May 2023, 01:32 PM

অতীতের বিরোধ ভুলে সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টা নিয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ১২ বছরের মধ্যে প্রথম সিউল সফরে গেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।

রোববার কিশিদাকে স্বাগত জানানোর সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল বলেন, আন্তর্জাতিক সংকটের মুখে অতীতের অমীমাংসিত বিরোধ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক নিবিড় করার পথে বাধা হতে পারে না।

উত্তর কোরিয়া এবং চীনের বাড়তে থাকা হুমকি মোকাবেলার পন্থা হিসাবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতার প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের আগে গত মার্চে অতীতের বিরোধ ভুলে জাপান সফর করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল। যা দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক বলে স্বীকৃত হয়েছিল।

ইয়োলের সেই সফরেরই পাল্টা আমন্ত্রণে এবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা দক্ষিণ কোরিয়া সফর করছেন।

তার সঙ্গে বৈঠকের উদ্বেধনী বক্তব্যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়োল বলেছেন, “দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মধ্যে সহযোহিতা এবং সমন্বয় অপরিহার্য। বর্তমানে মারাত্মক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটি কেবল দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থেই নয় বরং বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি।”

তিনি বলেন, অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয় মানেই এই নয় যে, সামনে আগিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আর সম্পর্ককে যে কোনও সময়ের চেয়ে ভাল করতে চান বলেও জানান ইয়োল।

ওদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বলেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার মতো আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয়ের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করার আশা করছেন।

তিনি এ মাসে জাপানে জি-৭ সম্মেলনে ইয়োলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিশিদা এবছরের শুরুর দিকেই চীনের সঙ্গেও ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে কিয়োদো বার্তা সংস্থা এখবর জানিয়েছে।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উঠলে বলা যায়, আমাদের সামনে সহযোগিতা করার অনেক সুযোগ আছে।”

গত মার্চে জাপানে দক্ষিণ কোরিয়ার নেতার সফরের আগে দিয়ে এক সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া চার চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়েছিল।

আঞ্চলিক এই হুমকির মুখে নিজেদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অতীতের বরফ শীতল সম্পর্ক ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে চাইছে এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ।

জাপানের সঙ্গে প্রথম একটি বৈঠকের আবহ তৈরির কঠিন কাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক খুব সফলভাবে করেছেন।

এতদিন ধরে এই দুই প্রতিবেশী দেশ ঐতিহাসিক নানা জটিলতায় জর্জিরিত ছিল। ১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের উপনিবেশ ছিল।  

ওই সময়ে জাপানের সেনারা লাখ লাখ কোরীয়কে খনি ও কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করেছে। কোরীয় নারীদের তারা করে রেখেছিল যৌনদাসী। পুরাতন ওই ক্ষত এখনও কেউ ভুলে যায়নি বা মাফ করাও হয়নি।

তবে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করাকে প্রাধান্য দিয়ে র্মার্চেই একটি উদ্যোগ নেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানি সেনাদের দাসত্বের শিকার হওয়া কয়েকজনের জন্য জাপানের কাছ থেকে সিউলের যে ক্ষতিপূরণের দাবি ছিল তা প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

তার পরিবর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার নিজেই ক্ষতিপূরণের অর্থ যোগাড় করে নেওয়ার জন্য রাজি হন ইয়ুন। জাপানি কারখানায় শ্রমে বাধ্য হওয়া দক্ষিণ কোরীয়দেরকেও সিউলের পক্ষ থেকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।

এর মধ্য দিয়ে উত্তরপূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার খাতিরে জাপানের সঙ্গে অতীত বিরোধকে ইয়ুন সরিয়ে রাখারই চেষ্টা নেন।