ইউরোপের দৃষ্টি এখন জার্মানির ভোটের ফলের দিকে। এই নির্বাচন ইইউর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এ দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Published : 22 Feb 2025, 02:58 PM
বাজেট নীতি ও অর্থনীতির গতিমুখ নিয়ে বিরোধের ধারাবাহিকতায় অর্থমন্ত্রীকে পদচ্যুত করার জেরে জোট সরকারের পতনের সাড়ে তিন মাস পর নতুন নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছে জার্মানি।
রোববারের এ ভোটের দিকে পুরো ইউরোপও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশের এবারের নির্বাচনে অভিবাসনবিরোধী কট্টর জাতীয়তাবাদী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) ভোট ও আসন বাড়তে পারে বলে বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন।
দলটি এবার ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেলে পার্লামেন্টে তাদের আসন দেড়শতে পৌঁছাতে পারে। জার্মানির পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৬৩০।
তেমনটা হলে এএফডি সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে জার্মানির নানান নীতিতে তাদের প্রাধান্য দেখা যেতে পারে।
দলটির নেতা এলিস ভাইডেল তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব। টিকটকে তার রয়েছে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ফলোয়ার, যা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক এগিয়ে রেখেছে।
ইলন মাস্ক ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও কট্টরপন্থি ভাইডেলকে সমর্থন করছেন। তার দল জার্মানির সীমান্ত সুরক্ষিত করা এবং অবৈধ অভিবাসী ও অপরাধীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মূলধারার প্রায় সব দল এএফডির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও রোববারের ভোটে কোনো একক দলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন কঠিন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
যে কারণে নতুন সরকার গঠনে খানিকটা সময় যেমন লাগতে পারে, তেমনি এএফডির গুরুত্বও বেড়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন জনমত জরিপে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্টির (সিডিইউ) সম্ভাবনাকে এগিয়ে রাখছেন।
দলটির প্রার্থী ফ্রিদরিখ মার্জ বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে জার্মানি ইউরোপের দায়িত্ব নেবে।
ভোটের আগে ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছের প্রযুক্তি-নগরী ডার্মস্টাডে হাজারের বেশি সমর্থকের সামনে আত্মবিশ্বাসী মার্জ যে বার্তা দেন, সেটি হচ্ছে- বিশ্বের ক্ষমতার কেন্দ্রে বড় পরিবর্তন আসছে।
এক হাত পকেটে, অন্য হাতে মাইক্রোফোন ধরে তিনি বলেন, “আমরা এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে। রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দশকের পর দশক ধরে আমরা যা দেখে এসেছি, তা বদলে যাচ্ছে।”
বিদায়ী সরকারের নেতৃত্বহীনতার সমালোচনা করে তিনি নির্বাচিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের দল মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ভোটে তৃতীয় হতে পারে। তেমনটা হলে সিডিইউ ও এসপিডি-ই জোট গঠন করবে তবে শলৎজ আর চ্যান্সেলর পদে ফিরতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে কট্টর বামপন্থিদের ভোটও বাড়বে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
বিবিসি লিখেছে, কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্থবির হয়ে আছে জার্মানি। আগের সরকারের পতনের পর দেশটিতে নানান সংকটও দেখা দিয়েছে।
ইইউর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ও সবচেয়ে বড় অর্থনীতির জন্য এই নির্বাচন কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের প্রচারে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, তেমনি অভিবাসন ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গও জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে।
গত বছরের মে মাস থেকে জার্মানিতে একের পর এক প্রাণঘাতি হামলা হয়েছে। এসব হামলায় জড়িত সন্দেহে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তারা সবাই অভিবাসী। যে কারণে অভিবাসন বিরোধিতার ঢেউ দেশটির প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে।
এএফডি বা রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় এলে জার্মানিতে অভিবাসীদের ওপর দমনপীড়ন নেমে আসতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।
সেই ভয় থেকে শুক্রবার রাতে জার্মানির সোলিনজেনে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ।
“আমাদের অনেক বন্ধু আছে, যাদের বাবা-মা জার্মানিতে অভিবাসী হিসেবে এসেছেন। আমরা চাই না কেউ তাদের বের করে দিক, আমরা চাই না সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাক,” বলেছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৫ বছর বয়সী নাটালি।
বিক্ষোভস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।