আরও ৭৩২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নেতা। থাইল্যান্ডে বহুতলের ধ্বংসস্তূপে ১১৭ জন নিখোঁজ, বলছেন উদ্ধারকারীরা।
Published : 28 Mar 2025, 08:54 PM
মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং ৬ দশমিক ৮ মাত্রার পরাঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪৪ জন নিহত হয়েছে এবং ৭৩২ জন আহত হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওদিকে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মীয়মাণ একটি বহুতল ভবন ভেঙে প্রাথমিকভাবে ৩ জন নিহত এবং ৮১ জন নির্মাণ শ্রমিক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ার তথ্য জানিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী।
তবে পরে বিবিসি ব্যাংককের মেট্রোপলিটন প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অন্তত ৭ জন। ওদিকে, ঘটনাস্থলের উদ্ধারকারীরা ১১৭ জন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন বার্তা সংস্খা রয়টার্সকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের হিসাবে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরে, মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। সেকারণে মিয়ানমারে বিপর্যয় অনেক বেশি।
মান্দালয়ে একটি মসজিদ ভেঙে পড়ে প্রাথমিকভাবে ৩ জন নিহত এবং রাজধানী নেপিধোর একটি হাসপাতাল থেকে ২০ জন নিহতের খবর জানা গিয়েছিল।
পরে বিবিসি বার্মিজ জানায়, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নেতা মিন অং হ্লায়িং ভূমিকম্পে শত শত মানুষ হতাহত হওয়ার ওই তথ্য জানিয়েছেন।
কোথায় কোথায় কতজন নিহত হয়েছে সে হিসাব দিয়ে হ্লায়িং বলেছেন, নেপিধোয় ৯৬ জন,সাগাইংয়ে ১৮ জন এবং মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি। আহত যারা হয়েছেন তাদের ১৩২ জনই নেপিধোর এবং ৩০০ জন সাগাইংয়ের বাসিন্দা বলে জানান হ্লাইং।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে গত ২০ বছরের মধ্যে এত তীব্র ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি। মিয়ানমার জান্তা জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে।
মান্দালয়ে অনেকে খালি হাতে ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে মানুষজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। উদ্ধার কাজের জন্য তাদের হাতিয়ার দরকার বলে বিবিসি সাংবাদিককে জানিয়েছেন একজন।
গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমার। তার মধ্যে এই ভূমিকম্প বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী নেপিধো। প্রথম দুটো ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে আরও চারটি পরাঘাত অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভেঙে পড়েছে মিয়ানমারের বহু এলাকার বাড়িঘর, মসজিদ, উপড়ে গেছে গাছ। ফাটল ধরেছে রাস্তায়, ভেঙে গেছে সেতু, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। মোবাইলের টাওয়ার উপড়ে বহু এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়েছে।
তবে মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়। মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ বলেছেন, হাজার হাজার মানুষের জরুরি আশ্রয়, খাবার এবং চিকিৎসা সহায়তা দরকার।
তাছাড়া, বহু এলাকায় ভুমিকম্পের প্রভাব কতটা পড়েছে তা জানতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে বলেও জানান তিনি। রেড ক্রসের আশঙ্কা, মিয়ানমারের বড় বড় বাঁধগুলোতে কম্পনের কারণে ফাটল ধরে থাকতে পারে। ফলে বন্যাও দেখা দিতে পারে। এতে বিপর্যয় আরও বাড়বে।
মিয়ানমারের এই ভূমিকম্পের ধাক্কা থাইল্যান্ডে লাগার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী পয়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রাও জরুরি অবস্থা জারি করেছেন এবং বিশেষ করে রাজধানী ব্যাংকক-কে ‘বিপর্যয় এলাকা’ ঘোষণা করেছেন। শহরের রেল চলাচল শুক্রবারের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, ব্যাংককে ধসে পড়া আকাশচুম্বী ৩০ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চলছে। নিখোঁজদের হন্যে হয়ে খোঁজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
শুক্রবারের এই ভূমিকম্পের আঁচ লেগেছে চীনের কিছু এলাকায়ও। এনডিটিভি জানায়, চীনের ইউনান প্রদেশে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক কেন্দ্র বলেছে, এই ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯। তবে সেখানে কেউ নিহত হওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি।
ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাতে কম্পন অনুভূত হয়েছে। কলকাতায় কোথাও কোথাও মৃদু কম্পন টের পাওয়া গেছে। কম্পন অনুভূত হয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। কেঁপেছে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামও।
ভূমিকম্প মিয়ানমারে নতুন নয়। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশটিতে শক্তিশালী ছয়টি ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস আছে। মিয়ানমারের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত সাগাইং চ্যুতিরেখা। সেকারণে প্রায়ই ভূমিকম্প হয় মিয়ানমারে।