কৃষক এবং সরকার পক্ষের চতুর্থ দফার বৈঠকে তিনটি ফসলের উপর চুক্তিভিত্তিক সহায়ক মূল্যের প্রস্তাব দেওয়া হলেও কৃষকরা তা খারিজ করেছে।
Published : 21 Feb 2024, 04:59 PM
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের সঙ্গে চার দফা আলোচনাতেও অচলাবস্থা কাটাতে সক্ষম হয়নি।কৃষক এবং সরকার পক্ষের চতুর্থ দফার এ বৈঠকে তিনটি ফসলের উপর চুক্তিভিত্তিক সহায়ক মূল্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
কিন্ত গত সোমবার কৃষকরা সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে বুধবার থেকে আবার দিল্লি চল যাত্রা শুরু করার কথা জানায়। সেই ঘোষণা অনুসারে ফের কৃষকরা দিল্লি অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এ যাত্রায় এক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পাঞ্জাবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বিবিসি কে ২২ বছর বয়সী একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। কৃষক ইউনিয়ন এর আগে পুলিশের আক্রমণে ওই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল।
তবে হরিয়ানার পুলিশ বিক্ষোভে কোনও কৃষকের মারা যাওয়ার খবর অস্বীকার করেছে।
পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তের শম্ভু এলাকায় গত সপ্তাহ থেকে ডেরা গেঁড়ে অবস্থান নিয়ে ছিলেন কৃষকরা। দিল্লি অভিমুখে প্রথম যাত্রার সময় তারা শম্ভু সীমান্তে অবস্থান নেন।সেখান থেকেই বুধবার প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের রাজধানী দিল্লি অভিমুখে তারা আবার যাত্রা শুরু করেন।
কৃষকদের ঠেকাতে রাস্তায় ব্যাপক শক্তি নিয়ে অবস্থান নিয়েছিল পুলিশ। বিভিন্ন পয়েন্টে কংক্রিট ব্লক, কাঁটাতারের বেড়া এবং রাস্তায় তারকাটা বিছিয়ে দেওয়া হয়।বিবিসি পাঞ্জাবী সার্ভিসের খবরে বলা হয়, বিক্ষুব্ধ কৃষকরা সীমান্তের দিকে এগুনোর চেষ্টা করার সময় পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে।
তবে কৃষকরা গত সপ্তাহের চাইতে এ সপ্তাহে আরও বেশি প্রস্তুত হয়েই মাঠে নেমেছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তারা টিয়ারগ্যাসের শেল থেকে সুরক্ষা পেতে মাস্ক,গ্লাভস এবং সেফটি স্যুট পরে বিক্ষোভে নামে।
ড্রোন থেকে পুলিশের টিয়ারগ্যাস ছড়ানোর চেষ্টা বাধাগ্রস্ত করতে বিক্ষোভকারী কৃষকদের অনেকেই ঘুড়ি উড়িয়েছেন। খামার নেতারা বারবারই ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আবেদন জানিয়েছেন তাদের ‘ভাইদের’ ওপর আক্রমণ না করতে।
কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডে কৃষকদেরকে পঞ্চম দফা আলোচনার আহ্বান জানান। এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, “আমাদের জন্য শান্তি রক্ষা করা জরুরি।” তবে কৃষকরা এই আলোচনার আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।
কৃষক সংগঠনগুলো যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে তার মধ্যে অন্যতম হল, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মওকুফ করারও দাবি তুলেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।
এছাড়াও, ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। বিদ্যুৎ আইন ২০২০ বাতিল এবং লখিমপুর খেরিতে নিহত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়েছে।
কৃষক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে সরকারের চার দফা বৈঠক হয়ে গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, দু’বছর আগে কৃষকদের অর্ধেক দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেন্দ্র কিছুই করেনি।
২০২০ সালেও কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা ভারত। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে লাগাতার আন্দোলন চলে। সেই আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ‘বিতর্কিত’ কৃষি বিল প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কৃষক সংগঠনগুলোও নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে।