যুক্তরাষ্ট্রের পর উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে আইআরজিসি-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করল কানাডা।
Published : 20 Jun 2024, 05:28 PM
ইরানের ইসলামিক ‘রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস’ (আইআরজিসি)-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে কানাডা। বিরোধী আইনপ্রণেতা এবং ইরানি প্রবাসীদের কয়েক বছরের দাবির মুখে এ পদক্ষেপ নিল দেশটি।
বুধবার কানাডার জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক এই সিদ্ধান্তকে 'বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার' বলে বর্ণনা করেছেন।
বিবিসি জানায়, সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত হওয়ার মানে হচ্ছে, আইআরজিসি'র শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ইরানের কয়েক হাজার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা কানাডায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
ইরানে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অভিজাত আইআরজিসি বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব আছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে এ বাহিনীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
আইআরজিসির প্রায় দুই লাখ সক্রিয় সদস্য আছে। এই বাহিনীর আছে নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী। তারা ইরানের কৌশলগত অস্ত্র তদারক করে।
কেবল ইরানই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই আইআরজিসি প্রভাবশালী। আইআরজিসি তার বিদেশি অভিযান পরিচালনা শাখা ‘কুদস ফোর্স’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন মিত্রদেশের সরকারসহ তেহরানপন্থি সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
কানাডা এর আগে কুদস ফোর্সকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। আর বুধবারের ঘোষণায় পুরো আইআরজিসি-কেই সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে তারা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কানাডার জননিরাপত্তা মন্ত্রী লেব্ল্যাঙ্ক বলেন, “এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে একটি শক্ত বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আর তা হল, আইআরজিসি'র সন্ত্রাসী সত্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কানাডা তার হাতে থাকা সব হাতিয়ারই ব্যবহার করবে।”
তিনি আরও বলেন, “ইরানের শাসকগোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে দেশের ভেতরে-বাইরে মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করে আসছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করতে চাইছে।”
আইআরজিসি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত হওয়ায় এখন কানাডায় অবস্থান করা ইরান সরকারের বহু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাকে তদন্তের মুখে পড়তে হতে পারে। এমনকি তাদেরকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়াও হতে পারে।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সতর্ক করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের পর ইরানে অবস্থানরত কানাডীয়রা নির্বিচারে আটক হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
তিনি বলেন, “আমার বার্তা পরিষ্কার, যারা এ মুহূর্তে ইরানে আছেন, তাদের ঘরে ফেরার সময় হয়েছে। আর যারা ইরানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা যাবেন না।”
এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তেহরানে ফ্লাইট পিএস ৭৫২ গুলি করে ভূপাতিত করে আইআরজিসি। এতে বিমানের ১৭৫ আরোহীর সবাই নিহত হন। তাদের মধ্যে ৫৫ জন কানাডীয় নাগরিক এবং ৩০ জন কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। যদিও তেহরান দাবি করেছিল, বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ভুল করেই করা হয়েছে।
পরে নিহতদের পরিবারসহ কিছু প্রবাসীর চাপের মুখেও আইআরজিসি-কে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন কানাডা সরকার।
ট্রুডো তখন বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ নেওয়া হলে যারা আগে আইআরজিসি-তে কাজ করেছিলেন বা যারা ইরানিদের সন্ত্রাসী কাজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি্লেন এবং ইরানি শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা করে কানাডায় পালিয়ে এসেছেন তারা নিশানা হতে পারেন।
“তবে এখন কেন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কানাডার জননিরাপত্তামন্ত্রী লেব্ল্যাঙ্ক বলেন, একটি গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি নিরাপত্তা বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া হয়ে থাকে এবং এটি পররাষ্ট্র নীতির আওতায় বিবেচ্য একটি বিষয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে আইআরজিসি-কে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে আইআরজিসি-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করল কানাডা।
যুক্তরাজ্য ২০২৩ সালে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল, তবে এখনও দেশটি তা করেনি।