ক্যামেরন না মিলিব্যান্ড- জনরায়ের অপেক্ষায় যুক্তরাজ্য

আগামী পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসছেন কারা, ১০ ডাউনিং রোডের আবাস কি ডেভিড ক্যামেরনেরই থাকবে, না কি নতুন বাসিন্দা হয়ে উঠবেন এড মিলিব্যান্ড- বৃহস্পতিবার ভোটের মাধ্যমে জবাব মিলবে সে প্রশ্নের।

সৈয়দ নাহাস পাশা লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 09:19 AM
Updated : 7 May 2015, 01:12 PM

এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টিই কি আবার সরকার গঠন করবে, না পাঁচ বছরের বিরতিতে ক্ষমতায় ফিরবে লেবার পার্টি, তার সুস্পষ্ট কূল-কিনারা দিতে পারছে না ভোটপূর্ব জনমত জরিপগুলো।

প্রধান দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিললেও কেউ সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না বলেই জনমত জরিপগুলো বলছে। ৬৫০ আসনের ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য ৩২৬ আসন লাগবে।

বিবিসির সর্বশেষ জনমত জরিপে সামান্য এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা। তাদের প্রতি ৩৪ শতাংশের বিপরীতে লেবার পার্টির সমর্থন ৩৩ শতাংশ।

এছাড়া ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) ১৩ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্রেটস ৮ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ৫ শতাংশ ও অন্যান্য ৬ শতাংশের সমর্থন পাচ্ছে বলে এই জরিপে বলা হয়েছে।

আসনের হিসাব দেখিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান বলেছে, কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ বিরোধীরা জোটবদ্ধ হলে তারাই সরকার গঠন করতে পারেন।

ভোটের আগের দিনের জনমত জরিপের ভিত্তিতে ৬৫০ আসনের হিসাব দিয়েছে তারা, যাতে কনজারভেটিভরা ২৭৬, লেবার ২৬৯, লিবারেল ডেমোক্রেটস ২৭, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) ৫৩, ইউকেআইপি ৩, গ্রিন পার্টি ১ এবং অন্যরা ২১টি আসন পেতে পারেন।

লেবার সমর্থক এই সংবাদপত্রটির হিসেবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট জোটের মোট আসন হচ্ছে ৩০৩টি, যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।

অন্যদিকে কনজারভেটিভ বিরোধীদের জোট হলে লেবার, এসএনপি, এসডিএলপি, পিসি ও গ্রিন পার্টির আসন হয় ৩২৯টি, যা প্রয়োজনীয় ৩২৬ আসন ছাড়িয়ে যায়।

এদিকে ভোটের আগের দিন এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী লন্ডনের ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছে লেবার পার্টি।

সমর্থকদের সঙ্গে ক্যামেরনের সেলফি

সমাবেশে এড মিলিব্যান্ড

ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডের ওই জরিপে দেখা যায়, লন্ডনে লেবার পার্টির জনসমর্থন বেড়ে ৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে। সেখানে কনজারভেটিভদের সমর্থন ৩৩ শতাংশ, আর ৯ শতাংশ জন সমর্থন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে নিক ক্লেগের লিবারেল ডেমোক্রেটস।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তুলনামূলক ছোট তিন দল লিবারেল ডেমোক্রেটস, ইউকেআইপি ও স্কটল্যান্ডভিত্তিক দল এসএনপির কতজন এমপি নির্বাচিত হন এবং দলের নেতারা কোন পক্ষে যান, তার উপরই নির্ভর করবে পরবর্তী সরকার।

কোন দল ক্ষমতায় যাচ্ছে তা নিয়ে বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে যতটা আগ্রহ, তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের কারা নির্বাচিত হচ্ছেন তা নিয়ে।

এবারই প্রথম মূলধারার দলগুলো থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ডজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হলেও ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১১ জন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী হয়েছেন লেবার পার্টি থেকে সাতজন। অভিবাসীদের মধ্যে বরাবরই এই দলটির সমর্থন বেশি এবং সে ধারার ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশিরাও।  

এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটস থেকে তিনজন এবং কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্রার্থীর ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে বৃহস্পতিবারের এই ভোটে।

লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া সাতজনের মধ্যে চারজনই নারী, এর মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি রুশনারা আলী এবং বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকও রয়েছেন।

রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক

বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া অন্যরা হলেন- রূপা হক, মেরিনা  আহমেদ, আনওয়ার বাবুল মিয়া, আলী আখলাকুল ও এমরান হোসাইন।

এদের মধ্যে বর্তমান এমপি রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে, টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন, রূপা হক ইলিং সেন্ট্রাল, মেরিনা আহমদ বেকেনহ্যাম, আনওয়ার ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিলড, আখলাকুল রায়গেইট অ্যান্ড বানস্টেড ও হোসাইন নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসন থেকে লড়ছেন।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে লন্ডনের বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহ্যাম আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মিনা রহমান এবং লিবডেম থেকে নর্দাম্পটন সাউথ আসনে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, লুটন সাউথ থেকে আশুক আহমদ এবং ওয়লেসের আর্ফন থেকে মোহাম্মদ সুলতান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মধ্যে অধিকাংশই লন্ডনের বিভিন্ন আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। লন্ডনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে লেবার দলীয় তিন নারী প্রার্থী রুশনারা, টিউলিপ ও রুপা হক শুধু বাঙালি কম্যুনিটিতে নয়, মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রেও ছিলেন গত এক মাস।