প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মোদি

ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2014, 12:49 PM
Updated : 27 May 2014, 09:44 AM

সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তার সরকারি বাসভবনে মোদিকে শপথ পড়ান।

এ সময় হিন্দিতে মোদি বলেন, “আমি নরেন্দ্র মোদি ঈশ্বরের নামে শপথ করছি যে, আমি ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করব”।

“ভয়, ঘৃণা, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেব না। সংবিধান অনুযাযী ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে কাজ করব।”

শপথ নিয়েই ভারতের গৌরবজ্জ্বোল ভবিষ্যতের জন্য জনগণের সহায়তা কামনা করেন মোদি বলেন, উন্নত ও শক্তিশালী ভারত গড়ার স্বপ্ন পূরণে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙ্গিনায় প্রায় চার হাজার অতিথির উপস্থিতিতে শপথ নেন মোদি। বিজেপি ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরাও উপস্থিত হন তার শপথ অনুষ্ঠানে।

মোদির পরে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং ও সুষমা স্বরাজ শপথ নেন। মোদির সরকারে এই দুজন পেয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। শপথ গ্রহণ করেছেন মোদির মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরাও।

সুষমা স্বরাজ হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনাথ সিং হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী হয়েছেন এবং প্রতিরক্ষমন্ত্রীর দায়িত্বও দেয়া হয়েছে তাকে।

পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন অনন্ত কুমার। রাসায়নিক দ্রব্য ও সারের অতিরিক্ত দায়িত্বও পেয়েছেন তিনি। স্থল পরিবহন ও শিপিং মন্ত্রনালয় পেয়েছেন নীতিন গাড়কারি। রেলমন্ত্রী হয়েছেন সদানন্দ গৌড়া।

ভেঙ্কাইয়া নাইড়ু নগর উন্নয়ন মন্ত্রী। টেলিকম মন্ত্রণালয় ও আইন ও বিচারের দায়িত্বে রবি শংকর প্রসাদ। কৃষির দায়িত্ব পেয়েছেন রাধা মোহন সিং।

গান্ধী পরিবারের বধূ মানেকা গান্ধী শিশু ও নারী উন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন। সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নাজমা হেপতুল্লাহ। স্মৃতি ইরানি মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী।

উত্তর প্রদেশ থেকে মোদিসহ ৯জন মন্ত্রী হয়েছেন। মহারাষ্ট্র থেকে হয়েছেন ৬জন। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরখান্ড, পশ্চিম বঙ্গ ও কেরালা থেকে কোন মন্ত্রী হয়নি।

সার্কের দেশগুলোর পাশাপাশি মরিশাসের নেতা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সবার দৃষ্টি ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দিকেই। মোদির সঙ্গে মঙ্গলবারই শরীফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা। মোদির অভিষেককে এক মাহেন্দ্রক্ষণ ও বড় একটি সুযোগ হিসাবেই দেখছেন নওয়াজ।

নওয়াজ শরীফসহ শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে থাকায় এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ভারতের সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও উপস্থিত হন মোদির শপথে। দেখা গেছে ক্রিকেট, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গণের তারকাদেরও।

ওদিকে, মোদির মা ও দুই ভাই শপথ অনুষ্ঠান দেখেন টিভিতে। আর মোদির সমর্থকরা শপথ অনুষ্ঠান স্থলের কিছু দূরেই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদরদপ্তরে আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে আতশবাজি করে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৮ টায় সাউথ ব্লক অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন মোদি।

এক দশক আগের দাঙ্গার জন্য সমালোচনা, আর দক্ষ হাতে গুজরাট পরিচালনা- নিন্দা আর প্রশংসার দুই বিপরীত ধারার মধ্যেই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে প্রায় দেড়শ’ বছরের দল কংগ্রেসকে ধসিয়ে দেন ৬৩ বছর বয়সী মোদি।

ভারতে ভোটের ইতিহাসে কংগ্রেসকে সবচেয়ে বড় লজ্জায় ডুবিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন
নরেন্দ্র মোদি। আর ১৯৮৪ সালের পর এবারই ভারত দেখল সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার।

সরকার গঠনের ন্যূনতম ২৭২ আসন ছাড়িয়ে লোকসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা ২৮২, আর জোট এনডিএকে হিসেবে আনলে এই সংখ্যা পৌঁছে যায় ৩৩৬ এ।