জেনেভা, ডিসেম্বর ১৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- ‘হিগস বোসন’ কণাকে ‘ঈশ্বর কণা’ বলার বিরোধিতা করেছেন পদার্থ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন ‘ঈশ্বর কণা’ নামটি বিজ্ঞানীদের দেওয়া নয়, গণমাধ্যমের দেওয়া।
মঙ্গলবার ইউরোপের একটি জনপ্রিয় রেডিও স্টেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যৈষ্ঠ পদার্থ বিজ্ঞানী বিষয়টির প্রতিবাদ করেছেন।
“হিগস বোসনকে আমরা কখনো ‘ঈশ্বর কণা’ বলে চিহ্নিত করিনি, এটি গণমাধ্যমের কাজ,” সাক্ষাৎকারে নম্রভাবে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদার্থ বিজ্ঞানী।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিক এর উত্তরে বলেন, “ঠিক আছে, আমি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, আমি হিগস বোসনকে ঈশ্বর কণাই বলব।”
তাদের এই কথা বিনিময়ে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বিজ্ঞান ও জনপ্রিয় গণমাধ্যমের সখ্য অনেক সময়ই মধুর হয় না।
সম্প্রতি, জেনেভার সার্ন গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা পদার্থ বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের অভীষ্ঠ ‘হিগস বোসন’ কণা আবিষ্কারের দাবি করেছেন।
হিগস বোসন অদৃশ্য হিগস ক্ষেত্রের কণা। মহা বিস্ফোরণের পর হিগস ক্ষেত্র থেকেই পরবর্তী বস্তুগত বিশ্ব বিকাশ লাভ করেছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। মহাবিশ্বের সবকিছু হিগস বোসনের মাধ্যমেই ‘ভর’ লাভ করেছে।
এভাবে তত্ত্বানুযায়ী প্রাথমিক কণাগুলো থেকে গ্রহ, নক্ষত্র, প্রাণ পর্যন্ত সবকিছু সৃষ্টির পেছনেই আছে হিগস বোসন কণা। তাই গণমাধ্যমের কর্মীরা এটিকে ‘ঈশ্বর কণা’ বলতে শুরু করে।
কিন্তু বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্বের সাথে ঈশ্বরকে জড়াতে চান না বিজ্ঞানীরা।
সার্ন গবেষণাগারের এটলাস (এটিএলএএস) দলের সদস্য কানাডার বিজ্ঞানী পলিন গ্যাগনন বলেন, “আমি ‘ঈশ্বর কণা’ শব্দবন্ধটিকে ঘৃণা করি।” এটলাস দলের সদস্যরাই হিগস বোসন নিয়ে সার্নে গবেষণা করছেন।
“হিগসকে কোনো ধর্মীয় অর্থে ব্যবহার করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয় নি। এটাকে ওই নামে ডাকা সত্যিই অদ্ভুত,” বলেন তিনি।
সার্নের গবেষক ও লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের অধ্যাপক জার্মান বিজ্ঞানী অলিভার বাখমুলার বলেন, “হিগস বোসনকে ‘ঈশ্বর কণা’ বলা সঠিক নয়, মহাবিশ্বে হিগসের যে ভূমিকার কথা আমরা ভাবি তার সাথে এটা ঠিক যায় না। আসলে ঈশ্বরের সাথে করার মতো কোনো কাজ এর নেই।”
এটলাস দলের অপর সদস্য পিপ্পা ওয়েলস বলেন, “যখন শুনি হিগস বোসনকে কেউ ‘ঈশ্বর কণা বলছে, আমার রাগ হয়। সার্নে আমরা কি করছি সে সম্পর্কে মানুষকে ভুল ধারণা দেয় এই শব্দবন্ধটি।”
মহা বিস্ফোরণের পর মহাবিশ্বের শুরুতে যে কণাটি প্রধান ভূমিকা রেখেছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই হিগস বোসন এর নাম রাখা হয়েছে বৃটিশ বিজ্ঞানী পিটার হিগস এর নামের শেষাংশ ‘হিগস’ ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম থেকে নেয়া ‘বোসন’ মিলিয়ে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এবি/সিআর/১৩১৩ ঘ.