ফিনল্যান্ড-সুইডেনের নেটোতে যোগদানে ৩৩ ‘কুর্দি সন্ত্রাসী’ হস্তান্তরের শর্ত তুরস্কের

দুই নর্ডিক দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোতে যোগদানে আপত্তি তুলে নিয়েছে তুরস্ক। তাবে তারা শর্ত দিয়েছে, ওই দুই দেশে আত্মগোপনে থাকা ৩৩ সন্দেহভাজন ‘কুর্দি সন্ত্রাসী’ ও ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের তুরস্কের হাতে তুলে দিতে হবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2022, 02:58 PM
Updated : 29 June 2022, 02:58 PM

তুরস্ক এ বিষয়ে এখন থেকে চাপ প্রয়োগ শুরু করবে বলে জানান তুরস্কের বিচারমন্ত্রী বাকির বোজদাগ। তিনি বলেন, তুরস্ক এখন তাদেরকে ‘নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে’ বলবে। ‘‘আমরা সন্ত্রাসীদের প্রত্যর্পণ চাইব।”

বিচারমন্ত্রী বোজদাগ ফিনল্যান্ডের কাছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টির (পিকেকে) ছয় সদস্য এবং তুরস্কের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছয় সদস্যকে তুরস্কের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান।

এছাড়া সুইডেনের কাছে পিকেকে’র ১১ সদস্য এবং ১০ গুলেন অনুসারীকে ফেরত চায় তুরস্ক। আঙ্কারার অভিযোগ, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন উভয় দেশই কুর্দি জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে। কুর্দিদের এবং তাদের দল কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টিকে (পিকেকে) সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক।

 কুর্দিদের আশ্রয় দিতে আগ্রহী থাকায় ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান। এদিকে, নেটোর নীতি অনুযায়ী, অন্যতম সদস্য দেশ তুরস্কের সমর্থন ছাড়া বাল্টিক সাগরঘেঁষা দেশ দুটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে পারত না।

বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার রাতে আঙ্কারার উদ্বেগগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া একটি যৌথ নিরাপত্তা সমঝোতায় সই করেন সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। যেখানে নর্ডিক দুই দেশ ‘নির্বাসন বা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের প্রত্যর্পণ নিয়ে তুরস্কের পড়ে থাকা অনুরোধগুলো দ্রুত বিবেচনা করে দেখতে রাজি হয়’।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যার জেরে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে পড়ে রাশিয়ার অন্য দুই প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। গত মাসে দেশ দুটি ৩০ সদস্যের সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।

তুরস্ক বাদে নেটোর অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো আগেই ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছিল। এখন আঙ্কারা রাজি হওয়ায় তাদের সদস্যপদ পাওয়ার পথ পরিষ্কার হয়ে গেল।

রাশিয়া অবশ্য ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের নেটোভুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। নেটোর পূর্বমুখী বিস্তৃতির আকাঙ্ক্ষাকে ইউক্রেইন যুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মস্কো। এ কারণ দেখিয়ে তারা প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আক্রমণ করায় অপর দুই প্রতিবেশী কথিত ‘নিরপেক্ষ’ দেশ সুইডেন ও ফিনল্যান্ড এখন নেটোতে যুক্ত হতে ছুটছে।

মাদ্রিদে নেটোর সম্মেলনে মঙ্গলবার তুরস্ক, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চার ঘণ্টা আলোচনা শেষে একটি সমঝোতায় উপনীত হন। ওই বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই নেটো নেতারা ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সদস্য হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নেটোপ্রধান ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, সন্দেহভাজন কুর্দি জঙ্গিদের হস্তান্তরে তুরস্কের অনুরোধ নিয়ে কাজ করার গতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে সুইডেন। দুই নর্ডিক দেশ তুরস্কে অস্ত্র বিক্রির ওপর বিধিনিষেধও তুলে নিচ্ছে, বলেছেন তিনি।