অস্ট্রেলিয়ার খনিগুলোতে ‘সাংঘাতিক ও পদ্ধতিগত’ যৌন হয়রানি

সহকর্মীরা অন্তর্বাস টেনে ধরছেন, পদোন্নতির বিনিময়ে সেক্স করতে চাইছেন বস; অযাচিত নগ্ন ছবি, বাঁকা কথা বলা এবং শারীরিক আক্রমণ- পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার খনিগুলোতে নারীদের এমন সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে রাজ্যটির পার্লামেন্টের এক তদন্তে বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2022, 11:24 AM
Updated : 23 June 2022, 11:24 AM

বৃহস্পতিবার জমা দেওয়া এ তদন্ত প্রতিবেদনে বড় বড় খনি কোম্পানি পরিচালিত সাইটগুলোতেও ব্যাপক যৌন হয়রানি চলছে বলে উঠে এসেছে, জানিয়েছে বিবিসি।

প্রতিবেদনে এ যৌন হয়রানিকে ‘সাংঘাতিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, এসব হয়রানি ‘সাধারণত মেনে নেওয়া বা চেপে যাওয়া হতো’।

লৌহ আকরিক, তামা ও অন্যান্য খনিজ তুলতে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত পিলবারা অঞ্চলে বড় বড় কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিএইচপি ও রিও টিন্টোর মতো অস্ট্রেলিয়ার সম্পদশালী খনি কোম্পানিগুলো।

এজন্য প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার শ্রমিক সেখানে উড়ে যায়, তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয় গ্রামীণ-শিবির ধরনের আবাসনের।

সমালোচকরা অনেক দিন ধরেই সেসব আবাসনগুলোতে ব্যাপক মদ্যপান, পুরুষশাসিত সংস্কৃতি বিকাশের সুযোগ দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন।

আদালতে হওয়া একাধিক মামলার প্রেক্ষিতে প্রায় বছরখানেক ধরে চলা এ তদন্তে রাজ্যের বড় বড় খনি কোম্পানি ও সরকারি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখা হয়েছে।

“টিটকারি, হামলা ও সহিংসতার লক্ষ্য হওয়া বিষয়ক জীবন্ত বাস্তবতার কথা শোনা, ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বনাশা ও হতাশাজনক অভিজ্ঞতা, জীবিকা হারানো বা হারানোর যে হুমকি তা স্তম্ভিত হওয়ার মতো এবং পুরোপুরি অমার্জনীয়,” বৃহস্পতিবার রাজ্য পার্লামেন্টকে এমনটাই বলেছেন তদন্ত কার্যক্রমের প্রধান লিবি মেটাম।

প্রতিবেদনে এক নারীর কথা বলা হয়েছে, যিনি বলেছেন, তিনি ‘তার ডোঙ্গায় (বাসস্থানে) অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন এবং জেগে ওঠার পর তার পরনের জিন্স ও অন্তর্বাস গোড়ালির কাছে দেখতে পান’। 

আরেকজন বলেছেন, “আমি এ ধরনের আধডজনের মতো সাইটে গিয়েছি আর সত্যি বলছি, আমি ওই সবগুলো সাইটেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। হয়রানির রকমফেরও আছে। কোথাও আজেবাজে মন্তব্য ও বক্রোক্তি, কোথাও অশ্লীল গুজব, কোথাও অনুমতি ছাড়া গায়ে হাত দিয়েছে, কোথাও নির্যাতনের শিকার হতে যাচ্ছি এমন ভয়ও পেয়েছিলাম।”

অন্য অনেক নারী তাদের সঙ্গে ‘শোভেলিং’ নামে পরিচিত ‘আগ্রাসী আচরণজনিত ব্যবহারের’ অভিযোগও করেছেন।

খনিগুলোতে এ ধরনের ‘সমস্যার’ কথা স্বীকার করে নেওয়া বিএইচপি ও রিও টিন্টোর মতো কোম্পানিগুলো অতীতে পরিস্থিতি বদলানোর অঙ্গীকার করেছিল।

বিএইচপি বলেছে, তারা অভব্য আচরণের জন্য গত দুই বছরে ৪৮ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। খনি সাইটগুলোকে নিরাপদ করতে তারা ২০১৯ সাল থেকে ২০ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে বলেও তদন্তকারীদের জানিয়েছে।

গত ৫ বছরে ২০-এর বেশি নারী ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা বা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, অভ্যন্তরীণ এক পর্যালোচনায় এমনটা বেরিয়ে আসার পর থাকার জায়গার উন্নতি ও লোকজন যেন সহজেই ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণের কথা বলতে পারে’ তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রিও টিন্টো।

বৃহস্পতিবারের তদন্ত প্রতিবেদনে ২৪টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে তথ্য নেওয়ার প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানো এবং এই খাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথাও আছে।

একের পর এক যৌন হয়রানি করে যাওয়ারা সাজা ভোগের বদলে এক সাইট থেকে অন্য সাইটে চলে যায়, এসব বন্ধে ‘অপরাধী নিবন্ধন’ চালু করা যায় কিনা প্রতিবেদনে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোকে তা খতিয়ে দেখতেও বলা হয়েছে।