কয়েকদিন পর থেকেই গ্যাস রপ্তানির বিল রুবলে: রাশিয়া

ইউরোপে শত শত কোটি ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির বিল রুবলে নেওয়া আর দিনকয়েক পর থেকেই শুরু হতে পারে বলে পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছে রাশিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2022, 10:27 AM
Updated : 26 March 2022, 10:27 AM

ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে যে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার পাল্টায় রাশিয়া এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে ‘অবন্ধু’ দেশে গ্যাস বিক্রির বিল রুবলে নেওয়ার সিদ্ধান্তই অন্যদের ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হতে পারে জানিয়ে শুক্রবার মস্কোর দিক থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেইনে রুশ অভিযানের কারণে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার ধাক্কায় রাশিয়ার অর্থনীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় চাপে পড়েছে; তার পাল্টা পদক্ষেপে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানির বিল রুবলে নেওয়ার নির্দেশ জারি করে পশ্চিমা দেশগুলোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন।

পুতিন বলছেন, রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে; যে কারণে রাশিয়াও আর নিজেদের পণ্য রপ্তানি করে ডলার বা ইউরো নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছে না।

শুক্রবার ক্রেমলিন বলেছে, পুতিন গ্যাজপ্রমকে রপ্তানি করা গ্যাসের মূল্য রুবলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, ওই নির্দেশ কার্যকরে তাদের হাতে সময় আছে আর মাত্র ৪ দিন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম ইউরোপের মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে।

রাশিয়ার ওপর যে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হয়েছে তার মধ্যে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য পরিশোধের জন্য রুবল কীভাবে পাওয়া সম্ভব, ক্রেতারা এখন সে সম্পর্কিত নির্দেশনা খুঁজছেন।

“রুবলে পণ্য পরিশোধ খুব কঠিন হবে এবং বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান ক্রেতার জন্য এটা করাটা সম্ভবও হবে না, বিশেষ করে এই অল্প সময়ের মধ্যে,” বলেছেন অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি স্টাডিজের গবেষক জনাথন স্টার্ন।

“যদি গ্যাজপ্রম রুবলে পণ্য পরিশোধে চাপ দেয় এবং রুবল না পেলে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমার দৃষ্টিতে সেটা হবে চুক্তির লংঘন,” বলেছেন তিনি।

রুবলে পণ্য পরিশোধ শুরু হলে তা রাশিয়ার মুদ্রাকে শক্তিশালী করে তুলবে, ইউক্রেইনে হামলার কারণে যার মান অনেকখানিই পড়ে গিয়েছিল।

বুধবার পুতিনের বক্তব্যের পরপরই রুবলের দর ডলারের বিপরীতে ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলো রুবলে পণ্য পরিশোধে আগ্রহী হবে কিনা বা পারবে কিনা, এই উদ্বেগ থেকে নেদারল্যান্ডে গ্যাসের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়।

এদিকে জার্মানির অর্থমন্ত্রী শুক্রবার জার্মান জ্বালানি সরবরাহ কোম্পানিগুলোকে গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধে মস্কোর দাবি না মানার পরামর্শ দিয়েছেন।

ইউক্রেইন নিয়ে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আলোচনার মধ্যেই পুতিন গ্যাসের বিল রুবলে নেওয়ার এ ঘোষণা দেন।

গত শতকের ৭০ এর দশকের প্রথম দিকে সাইবেরিয়া থেকে ইউরোপে সোভিয়েতের বানানো পাইপলাইনে গ্যাস যাওয়া শুরু হয়েছিল; রাশিয়ার সেই ‘গ্যাস রাজনীতির’ ক্ষেত্রেও পুতিনের এ ঘোষণাকে বড় ধরনের বাঁক বদল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এমনকী সোভিয়েত আমলেও তারা তাদের রপ্তানি করা জ্বালানির বিল বিদেশি মুদ্রায় নিত।

১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়া শাসন করে আসা পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন ডলারের আধিপত্য নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসছিলেন; ডলার তার ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিথ্যার সাম্রাজ্যের’ উপকরণ, যার লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়াকে ধ্বংস করা।

রাশিয়া এখন বলছে, সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশ, ডলার ও ইউরোর ব্যবহার নিয়ে মস্কোর যে বিভ্রম ছিল, তা কেটে গেছে।

রুবলে লেনদেন করার যে পরিকল্পনা পুতিনের তার সীমা কতদূর হতে পারে এ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়নি ক্রেমলিন। রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ তেল, গ্যাস ও ধাতু রপ্তানিকারক; এসব পণ্যের লেনদেন এতদিন সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ডলারে হতো।

মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলার বা ইউরোর বদলে গ্যাজপ্রম রুবল চাইলে তা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের বর্তমান চুক্তির লংঘন হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়।

ইউরোপের দেশগুলোর অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানই বলছে, গ্যাজপ্রমের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে মূল্য ইউরো বা ডলারে পরিশোধের শর্ত আছে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চেষ্টাও জোরদার করেছে। কিন্তু ইউরোপীয় ভোক্তাদের হাতে অন্য কোথাও থেকে এনে গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে এমন স্বল্পমেয়াদী বিকল্পও খুব একটা নেই। 

আরও পড়ুন: