ইউক্রেইন সীমান্তে রুশ সেনা সমাবেশের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, যে কোনও সময় সেখানে আগ্রাসন চালাতে পারে মস্কো। তবে এবার আরেক ‘বিস্ফোরক’ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেইনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে যেসব ইউক্রেইনীয়কে ‘হত্যা করা হবে কিংবা ক্যাম্পে পাঠানো হবে’ তার তালিকা এরই মধ্যে তৈরি করেছে রাশিয়া।
Published : 21 Feb 2022, 07:49 PM
গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ পাওয়া গেছে বলেই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেটের কাছে একটি চিঠি লিখে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি অবহিত করেছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। পত্রিকাটির দাবি, রোববার রাতে তারা এই চিঠির অনুলিপি হাতে পেয়েছে।
চিঠিতে লেখা হয়, ‘‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে তারা যে খবর পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন-পরবর্তী পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। আগ্রাসনের ঘটনায় ইউক্রেইনে তারা কাকে কাকে হত্যা করবে, গুম করবে বা নির্যাতন শিবিরে পাঠাবে তার তালিকা তৈরি হচ্ছে।” তবে কোন গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে সে বিষয়ে চিঠিতে কিছু উল্লেখ নেই।
গত বছর নভেম্বর থেকে ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে রাশিয়া লাখো সেনা মোতায়েন, ভারি অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করা, পূর্ব ইউক্রেইনে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর ফের তুমুল সংঘাত দেশটিতে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও উত্তেজনা চলছে। পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা, রাশিয়া যে কোনও মুহূর্তে ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালাবে।
রাশিয়া অবশ্য বার বার বলছে, ইউক্রেইনে আগ্রাসনের কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোর নেতারা যুদ্ধ আটকাতে রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেইন সংকট কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রান্স।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘নীতিগতভাবে’ সেই বৈঠকে বসতে রাজিও হয়েছেন। এ খবর প্রকাশের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর বিরুদ্ধে ইউক্রেইনে ‘হত্যাযজ্ঞ চালানোর তালিকা প্রস্তুত করার’ দাবি করল। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত বাথশেবা ক্রোকার জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেটকে এ সংক্রান্ত চিঠিটি লেখেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
চিঠিতে ক্রোকার আরও লেখেন, ‘‘মস্কোর ওই তালিকায় রাশিয়া ও বেলারুশে ওইসব নাগরিক যারা ভিন্নমতের কারণে নিজ নিজ দেশে টিকতে না পেরে ইউক্রেইনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন, সাংবাদিক, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনকর্মী এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুসহ এলজিবিটিকিউএলরা আছেন।”
ওদিকে, বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাশিয়া যে আগ্রাসনের পরিকল্পনা করছে এবং তা ‘শুরু হয়েছে’ এমন গোয়েন্দা তথ্য তাদের কাছে আছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র গণমাধ্যমে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালানো।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যে গোয়েন্দা তথ্য আমরা পাচ্ছি তাতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার আগ্রাসন চালানোর অভিপ্রায় আছে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের পরিকল্পনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।”