এই চুক্তি সাধারণ মানুষের জীবনে কী কী প্রভাব ফেলতে পারে তা বোঝার চেষ্টা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
পরিবর্তন চলাফেরায়
সামনের দিনগুলোতে জীবনযাপনে যে পরিবর্তনগুলো আসবে, তার একটি হবে যানবাহনে। জ্বালানি হিসেবে তেলের বদলে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন একটি বিদ্যুৎচালিত গাড়ির দাম পেট্রোল বা ডিজেলচালিত নতুন গাড়ির কাছাকাছি চলে আসবে। তাছাড়া ব্যবহৃত (রিকনডিশন্ড) বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারও ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে গাড়ি মিলবে আরও কম দামে।
বহু দেশের সরকার এবং গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন বাড়াতে এবং কার্বন গ্যাস ছড়ায় না এমন বাস ও ট্রাক আনতে একমত হয়েছে।
বাড়বে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ৪০টির বেশি দেশ কয়লার ব্যবহার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনতে চুক্তি সই করেছে। একই সংখ্যক দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বাসাবাড়ি বা কর্মক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার সহজলভ্য করতে কাজ করবে তারা।
বিবিসি লিখে, এ চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যের মত দেশে আগামী দিনে বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়তে থাকবে, সেই সঙ্গে বাড়বে পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা।
সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন ও ভারতের পক্ষ থেকে এ জ্বালানি থেকে সরে আসার কোনো ঘোষণা এবারের জলবায়ু সম্মেলনে আসেনি। তবে যে চুক্তি এবার হয়েছে, তাতে এই বার্তা বাজারে পৌঁছাবে যে, আগামী দিনগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোই যৌক্তিক হবে।
ঘর হবে আরও পরিবেশবান্ধব
বিবিসি লিখেছে, এবারের জলবায়ু চুক্তির পর অনেক দেশে ঘরে ঘরে সোলার প্যানেল ও হিট পাম্পের ব্যবহার বাড়বে। ঘরবাড়ি তৈরিতে সিমেন্ট ও কংক্রিটের মত উপকরণের বদলে স্বপ্ল কার্বনের উপকরণ ব্যবহার হবে। এসব অবকাঠামো যাকে জলবায়ুসহিষ্ণু হয়, সেদিকেও বাড়বে মনোযোগ।
বেশি কার্বন, বেশি খরচ
মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতির কারণেও বিভিন্ন দেশে কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়। যেমন আমদানি করা প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরত কিংবা বেশি বেশি উড়োজাহাজ ব্যবহারের মানে হল বেশি কার্বন নিঃসরণ।
ভবিষ্যতে হয়ত দেখা যাবে, সেই পণ্য উৎপাদনে যে কার্বন নির্গমণ হয়েছে, সেজন্য একটি করও পণ্যের দামের সঙ্গে যোগ হবে।
ফলে উৎপাদনকারী কোম্পানি যদি তার পণ্য উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ না কমায়, তাহলে তাদের পণ্যের দাম যাবে বেড়ে। সেই পণ্য তখন বাজার হারাবে। বেশি কার্বন নিঃসরণ করে এমন পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতেই এমন উদ্যোগ আসবে।
সে কারণে অ্যামাজন, ইউনিলিভার ও ইকিয়ার মত বড় কোম্পানিগুলো বলতে শুরু করেছে, যেসব জাহাজে করে তারা পণ্য সরবরাহ করে, সেগুলো যাতে তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে তারা।
দক্ষিণের বন বিনাশ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং উত্তরের ধনী দেশে তা ভোগের যে চক্র গড়ে উঠেছে, তা ভেঙে গেলে সয়াবিন, পাম তেল এবং আমদানি করা গোমাংসের বেড়ে যাবে।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে একশর বেশি দেশ বন বিনাশ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি চুক্তি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের চেয়ে দাম নিয়ে উদ্বেগ বেশি থাকলে ওই প্রতিশ্রুতি হয়ত কোনোদিনই বাস্তবায়ন হবে না। আর চুক্তি যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, ভোক্তাদের বাড়তি খরচ গুনতেই হবে, অথবা কমাতে হবে ভোগ।
প্রভাব থাকবে বিনিয়োগে
চারশর বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাদের হাতে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে, জলবায়ু সম্মেলনে তারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য অর্থের যোগান বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
এর মানে হল, মানুষের সঞ্চয় যারা জমা রাখছে, তারা ভবিষ্যতে সেই টাকা পরিবেশবান্ধ্বব খাতে বেশি খাটাবে। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঋণ পেতে সুদ কম দিতে হবে।