ব্রিটেনে সরবরাহজনিত সংকটের কারণে পাম্পগুলো জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়ার মধ্যে আতংকিত গাড়িচালকরা হুমড়ি খেয়ে কেনাকাটা করায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে, অবস্থা মোকাবেলায় পরবর্তী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে।
Published : 28 Sep 2021, 12:38 PM
ট্রাক চালকের অভাবে গত কয়েকমাস ধরে ব্রিটেনে খুচরা দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোতে পণ্য সরবরাহে গুরুতর ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে। জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও ফিলিং স্টেশনগুলোতে তা পাঠানো যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী নামানোর কথা বিবেচনা করছে সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করার পর ব্রিটেনজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। গাড়ি নিয়ে পেট্রল পাম্পগুলোর দিকে ছুটতে শুরু করে মানুষ। তেল ভরার জন্য লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে থাকে তারা আর এভাবে ব্রিটেনজুড়ে পাম্পগুলো জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়ে।
দেশটির সরকার ইতোমধ্যেই পাঁচ হাজার বিদেশি ট্রাক চালককে অস্থায়ী ভিসা দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সংকট মোকাবেলায় এই শিল্পের সাবেক চালকদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজন দেখা দিলে সামরিক বাহিনীর সীমিত সংখ্যক ট্যাংকার চালককে মোতায়েন করার জন্য প্রস্তুত রাখবে তারা।
“আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চাহিদা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা এমন আশা করলেও এটি ঠিক যে আমরা এই বিচক্ষণ ও পূবসতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি,” সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেং।
“প্রয়োজন হলে, জ্বালানির জন্য তৈরি হওয়া চাপ কমাতে অস্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করে সরবরাহ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত সক্ষমতা যোগানো হবে,” বলেছেন তিনি।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট সমাধানে সাহায্য করার জন্য মোতায়েন করার আগে সেনাবাহিনীর ট্যাংকার চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ব্রিটেনের পেট্রল রিটেইলার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিআরএ) জানিয়েছে, চাহিদার কারণে দেশটির কিছু কিছু এলাকার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পাম্প জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
ব্রিটেনের জ্বালানি শিল্প খাত জানিয়েছে, জ্বালানির কোনো ঘাটতি নেই, সমস্যা হয়েছে পেট্রল ও ডিজেল পাম্পগুলোতে সরবরাহ করা নিয়ে।
জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলি এক বিবৃতিতে বলেছে, “অনেক গাড়ি এখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জ্বালানি নিয়ে আছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চাহিদা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আমরা আশা করছি আর তাতে ফুয়েল স্টেশনগুলোতে চাপ কমে যাবে। প্রত্যেককে তাদের স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি কেনার জন্য উৎসাহিত করছি আমরা।”
কিন্তু পণ্য বহনকারী, গ্যাস স্টেশনগুলো ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ট্রাক চালকদের ঘাটতি এত বেশি যে দ্রুত এর সমাধান করা যাবে না কারণ জ্বালানি পরিবহন করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স লাগে।
বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে ব্রিটেনে প্রায় এক লাখ ট্রাক চালকের ঘাটতি আছে।
সরকার জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে যেসব লরি চালকদের ড্রাইভিং (এইচজিভি) লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা তাদের মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপও নিয়েছে তারা।
ব্রিটেনের পরিবহনমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস জানিয়েছেন, অপ্রয়োজনীয় জ্বালানি না কেনার জন্য যে বার্তা দেওয়া হয়েছিল তাতে জনগণ সাড়া দিচ্ছে, তাই ইতোমধ্যে পেট্রল পাম্পগুলোতে চাহিদা কমতে শুরু করেছে।