হুয়াওয়ে সিএফও মেংয়ের মুক্তির পর চীন ছাড়ল স্পেভর-কভরিগকে

চীনের কর্তৃপক্ষ কানাডার দুই নাগরিককে ছেড়ে দেওয়ার পর তারা দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উত্তর আমেরিকার দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2021, 04:56 AM
Updated : 25 Sept 2021, 05:11 AM

কানাডার পুলিশ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ধরার অল্প সময়ের মধ্যেই ২০১৮ সালে বেইজিং গুপ্তচরগিরির অভিযোগে মাইকেল স্পেভর ও মাইকেল কভরিগ নামের ওই দুই কানাডীয়কে আটক করেছিল।

মার্কিন কৌঁসুলিদের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর পর হুয়াওয়ের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে কানাডা ছেড়ে দেওয়ার পর স্পেভর ও কভরিগের মুক্তির খবর মেলে।

মেং শুক্রবারই চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

হুয়াওয়ে সিএফও’কে আটককাণ্ড বেইজিং ও অটোয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

শুক্রবার ট্রুডো স্পেভর ও কভরিগের ছাড়া পাওয়ার খবর জানিয়ে বলেন, এই দুই কানাডীয়কে ‘অবিশ্বাস্য কঠিন অগ্নিপরীক্ষার’ মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

“আমাদের সবার জন্য ভালো সংবাদ হচ্ছে, তারা তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে বাড়ির পথে রওনা হয়েছে। গত ১০০০ দিন তারা দৃঢ়তা, অধ্যবসায় ও সহনশীলতা দেখিয়েছে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।

স্পেভর ও কভরিগ দুজনই কানাডা সময় শনিবার দিনের প্রথমভাগে দেশে নামবেন, তাদের সঙ্গে চীনে কানাডার রাষ্ট্রদূত ডমিনিক বার্টনও থাকছেন বলে জানিয়েছেন ট্রুডো।

সাবেক কূটনীতিক কভরিগ ব্রাসেলসভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপে কাজ করতেন। আর স্পেভর এমন একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, যাদের মনোযোগ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগে।

চলতি বছরের অগাস্টে চীনের একটি আদালত স্পেভরকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে কভরিগের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মেংয়ের মুক্তি নিশ্চিতে ‘দরকষাকষির’ অংশ হিসেবেই এই দুই কানাডীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে পর্যবেক্ষকদের অনেকে আগে থেকেই বলে আসছিলেন।

এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, চীনে আটক কানাডার দুই নাগরিক আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘ভুগেছেন’।

মেং তার বিরুদ্ধে আনা জালিয়াতির অভিযোগ বিষয়ে মার্কিন কৌঁসুলিদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর পর শুক্রবার কানাডার এক বিচারক হুয়াওয়ের সিএফওকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

“গত তিন বছরে আমার জীবনে অনেক ওলটপালট হয়েছে। মেঘের পরেই সূর্য উঁকি দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি যেসব শুভকামনা পেয়েছি, তা আমি কখনোই ভুলবো না,” ভ্যাঙ্কুবারের আদালত ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের এ নির্বাহী।

কানাডায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মেংয়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনেন মার্কিন কৌঁসুলিরা।

ব্যাংক জালিয়াতি এবং স্কাইকম টেক নামের এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে অর্থ ও পণ্য ইরানে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল মেংয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, ওই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইরানের ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গেছেন হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠাতার কন্যা।

স্কাইকমের সঙ্গে হুয়াওয়ের সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি’র কাছে ভুল তথ্য দেওয়ারও অভিযোগ আনা হয় হুয়াওয়ে সিএফওর বিরুদ্ধে।

মেং এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

এ সংক্রান্ত বিচার স্থগিত রাখার চুক্তিতে মেং এইচএসবিসি ব্যাংক-কে হুয়াওয়ে ও স্কাইকমের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। হংকংভিত্তিক কোম্পানি স্কাইকমের সঙ্গে ইরানের ব্যবসা ছিল।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, মেং ছাড়া পেলেও হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে বিচারের প্রস্তুতি চলবে।

১৯৮৭ সালে হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠা করা ধনকুবের রেন ঝেংফেইয়ের বড় মেয়ে মেং।

রেন ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছর চীনের সেনাবাহিনীতে ছিলেন; তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিরও সদস্য।

হুয়াওয়ে এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম যন্ত্রাংশ নির্মাতা কোম্পানি; চীনের কর্তৃপক্ষ তাদের এসব যন্ত্রাংশ কাজে লাগিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে বলে অভিযোগ পশ্চিমা অনেক দেশের। তবে হুয়াওয়ে ও চীন প্রথম থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।