আফগানিস্তানে পুরুষ-সর্বস্ব তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে নারী বিক্ষোভ

আফগানিস্তান শাসনে তালেবানের নতুন পুরুষ-সর্বস্ব অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিরুদ্ধে রাজধানী কাবুল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশে বিক্ষোভ করেছে নারীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 06:18 PM
Updated : 8 Sept 2021, 06:18 PM

কোনও নারী মন্ত্রী ছাড়া সরকার মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে বুধবার নারীদের একটি ছোট দল তালেবানের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করেছে। “কোনও সরকারই নারীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারে না” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে পদযাত্রা করে তারা।

সিএনএন এর হাতে পাওয়া কয়েকটি ভিডিও এবং ছবিতে নারীদেরকে “আফগানিস্তানের নারীরা দীর্ঘজীবী হোক” স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।

কারও কারও হাতে ছিল দু’দিন আগেই তালেবানের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার অভিযোগ ওঠা সেই গর্ভবতী নারী পুলিশ কর্মকর্তা বানু নিগারের ছবির প্ল্যাকার্ড। তালেবান এই নারীকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

নারীদের অধিকার রক্ষায় বেশ কয়েকদিন ধরেই আফগানিস্তানে নারী বিক্ষোভ চলে আসছে। তার মধ্যে তালেবান নতুন সরকারের মন্ত্রীদের নাম ঘোষণার পর বুধবার নতুন করে এই নারী বিক্ষোভ হল।

এদিন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী বলেন, “আমরা সদ্য ঘেষিত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এখানে সমবেত হয়েছি। এই সরকারে নারীদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই।”

বিবিসি জানায়, নারীদেরকে মারধর করে তালেবান বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া কিছু সাংবাদিককেও মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি সংবাদ সংগঠন।

মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে সরকার প্রধান করে মঙ্গলবার নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সরকারের উপপ্রধান থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রীসহ সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীপদে এমনকী উপমন্ত্রীপদেও পুরুষকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সরকারে তালেবান ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা থাকলেও কোনও নারী স্থান পাননি। এমনকী কোনও নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও রাখা হয়নি।

তালেবান নেতারা এবার আফগানিস্তান দখলের পরই প্রকাশ্যে বলেছিলেন, আফগান সমাজে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু কার্যত সরকার গঠনের আলোচনায় নারীদের রাখা হয়নি। বরং সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে তালেবান এই সংকেতই দিয়েছে যে, নারীদের ঘরে থাকা উচিত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তালেবান নারীদেরকে কাজও ছাড়তে বলেছে।

তালেবানের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা নারীদের বিক্ষোভ কাঁদুনে গ্যাস, পিপার স্প্রে এবং গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করা হচ্ছে। নারীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে তালেবানের ভাষ্য, এই ধরনের বিক্ষোভ অবৈধ। বিক্ষোভকারীদেরকে পদযাত্রা করার অনুমতি নিতে হবে এবং  রূঢ় কোনও ভাষাও ব্যবহার যাবে না।

বুধবারের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে চাবুকপেটা এবং বেত্রাঘাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী। তিনি বলেন, “তারা (তালেবান) আমাদেরকে ঘরে ফিরে গিয়ে ইসলামিক আমিরাতকে মেনে নিতে বলেছে। কিন্তু যেখানে সরকারে আমাদেরকে স্থান দেওয়া হয়নি; আমাদের কোনও অধিকার দেওয়া হয়নি, সেখানে আমরা কেন আমিরাতকে মেনে নেব?”

বিক্ষোভ চলাকালে দায়িত্বরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আটক হয়েছেন জানিয়ে এই নারী বলেন, “আমরা কতদিন আর কেনই বা এইসব সহ্য করব?”

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরেক নারী বলেন, “তালেবান প্রমাণ করে দিয়েছে তারা বদলাতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের প্রশ্ন, বিশেষ করে যারা গত ২০ বছরে নারীদেরকে অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের উদ্দেশে বলছি, নারী অধিকারের সেই রক্ষকরা আজ কোথায়?”

তিনি জানান, পথ দিয়ে যেতে যেতে যেসব তরুণ বিক্ষোভ দেখেছে তাদেরকেও তালেবান পিটিয়েছে। কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে স্কুলের পথে যাওয়া ১৬ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে তালেবান। তার সারা শরীরে কালশিরে পড়ে গেছে।

স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকও মারধরে আহত তাদের দুই সাংবাদিককের ছবি দিয়েছেন টুইটারে। তালেবান তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেছে বলে জানান তিনি।

তালেবান মঙ্গলবার নতুন সরকারের সদস্যদের নাম ঘোষণার পর তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিতদেরই মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তালেবানের কয়েকজন বর্ষীয়াণ নেতাসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা হাক্কানি নেটওয়ার্কের মোস্ট ওয়ান্টেড নেতা এইসব পদের দায়িত্ব পেয়েছেন। আবার সরকারের প্রধানও করা হয়েছে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে, যার নাম আছে জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, তালেবান ‘সবার অংশগ্রহণ এবং প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে’ সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

বুধবার ২০ টি পশ্চিমা দেশের এক ভার্চুয়াল বৈঠকের পর সাংবাদিকদেরকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেনও বলেছেন, “তালেবান নিঃসন্দেহেই সবার অংশগ্রহণ ভিত্তিক সরকার গঠনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তারা খুবই চ্যালেঞ্জিং ট্র্যাক রেকর্ড থাকা লোকজনকে সরকারে নিয়েছে।”