বৃষ্টি ডেকে আনার লক্ষ্যে করা আচার অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি গ্রামে ৬ মেয়ে শিশুকে বিবস্ত্র করে একটি শোভাযাত্রায় হাঁটানো হয়েছে।
Published : 07 Sep 2021, 03:55 PM
মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখন্ডের খরাপীড়িত একটি গ্রামে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে বিবস্ত্র ওই মেয়ে শিশুদেরকে একটি কাঠের ভেলা কাঁধে তুলে হাঁটতে দেখা গেছে; যে ভেলাতে বাঁধা ছিল একটি ব্যাঙ।
এই আচার ‘বৃষ্টি দেবতা’কে তুষ্ট করবে এবং ফলশ্রুতিতে ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হবে, বিশ্বাস স্থানীয়দের।
এই ঘটনার পর ভারতের শিশু অধিকার রক্ষা বিষয়ক জাতীয় কমিশন দামো জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনাটি বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছে। যে গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি দামো জেলায় অবস্থিত।
মধ্যপ্রদেশের পুলিশ জানিয়েছে, তারা এ আচার অনুষ্ঠান নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ পায়নি, তবে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
“ওই মেয়েদের জোর করে বিবস্ত্র করা হয়েছে, এমন কিছু পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে এমনটাই বলেছেন দামোর পুলিশ সুপার ডিআর তেনিওয়ার।
ভিডিওতে খালি গায়ের যে মেয়েদের দেখা গেছে, তাদের কারও কারও বয়স ৫ বছর বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শোভাযাত্রায় এ মেয়েদের পেছনে ছিল নারীদের একটি দল, যারা দেবতাকে তুষ্ট করার গান গেয়ে যাচ্ছিলেন।
শোভাযাত্রাটি গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে গিয়ে থামলে শিশুরা সেসব বাড়ি থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে; এসব খাদ্যশস্য পরে স্থানীয় একটি মন্দিরের কমিউনিটি কিচেনে দিয়ে দেওয়া হয়।
“আমরা বিশ্বাস করি এরকমটা করলে বৃষ্টি আসবে,” শোভযাত্রায় অংশ নেওয়া এক নারী এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে পিটিআই।
দামোর জেলা কালেক্টর এস কৃষ্ণ চৈতন্য জানান, শোভাযাত্রার সামনে থাকা ৬ মেয়ের বাবা-মা’রা তাদের সন্তানদের বিবস্ত্র করে শোভাযাত্রায় হাঁটানোর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন, এমনকী তারা ওই শোভাযাত্রায় অংশও নিয়েছেন।
“এরকম ক্ষেত্রে প্রশাসন কেবল ওই গ্রামের বাসিন্দাদের এ ধরনের কুসংস্কারের নিরর্থকতা জানাতে পারে এবং এইসব চর্চায় যে কাঙ্ক্ষিত ফল মেলে না তা বোঝাতে পারে,” বলেছেন চৈতন্য।
ভারতের কৃষি ব্যবস্থা অনেকটাই বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির অনেক এলাকায় বৃষ্টি দেবতাকে তুষ্ট করতে নানান আচার অনুষ্ঠানের চল আছে।
কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টি আনতে করা হয় যজ্ঞ, কোথাও ব্যাঙ বা গাধার বিয়ে দেওয়া হয়; কোথাও আবার বৃষ্টি দেবতাকে তুষ্ট করতে বের হয় শোভাযাত্রা, গাওয়া হয় গান।
এ ধরনের আচার সাধারণ মানুষকে দুঃখ কষ্টের তীব্রতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে বলে অনেকে বললেও সংস্কৃতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এইসব চর্চা হচ্ছে হতাশার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে অংশ নেওয়ারা বিশ্বাস করেন সাহায্যের জন্য তাদের আর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।