মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ, সংকট সমাধানে আঞ্চলিক পদক্ষেপ চায় যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াংগনের কেন্দ্রস্থলে মিছিল করেছে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনকারীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2021, 11:49 AM
Updated : 14 July 2021, 11:49 AM

বুধবারের এই বিক্ষোভে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১০০ জনের মতো উপস্থিত ছিল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটি টালমাটাল সময় পার করছে।

দেশটিতে সহিংসতা বন্ধ ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ানে) দেশগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের অসংখ্য শহরে টানা বিক্ষোভ, ধর্মঘট ও আইন অমান্য আন্দোলন হয়েছে।

আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েকশ লোকের মৃত্যুর পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির শহরগুলোতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছিল না।

বুধবার ইয়াংগনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চিহ্নস্বরূপ তিন আঙ্গুলের স্যালুট দেয় এবং ‘আমরা কোভিডে ভীত নই, তাহলে আমরা জান্তাকে ভয় করবো কেন?’ এবং ‘বিপ্লব জয়ী হবেই’ স্লোগান দেয়। এদিনের মিছিলে সামনে থাকা কয়েক নারীর হাতে মশাল দেখা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ, গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও অন্যায়ভাবে আটকে রাখাদের মুক্তি নিশ্চিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে যৌথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এ কথা জানিয়েছেন। 

সংকট সমাধানে এপ্রিলে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের সঙ্গে আসিয়ান ৫টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল; সেসব বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ব্লিনকেন দেশটির সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানান।

ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা অনেক দেশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও আসিয়ান তার জোটভুক্ত দেশের সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার উপরই জোর দিচ্ছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এপ্রিলে আসিয়ানের সঙ্গে সহিংসতা বন্ধ ও সংকটের সমাধানে ব্যবস্থা নিতে একমত হলেও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক বাহিনীকে বিরোধীদের প্রতি বিন্দুমাত্র নমনীয় হতে দেখা যাচ্ছে না। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তারা নিজেদের পরিকল্পনা মাফিকই এগুচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।

দেশটির অভ্যুত্থানপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) হিসাব অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনী হাতে ৯০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আটক হয়েছে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী।

সামরিক জান্তা এর আগে এএপিপি’র দেওয়া নিহতের সংখ্যা ঠিক নয় বলে দাবি করেছিল; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকে হতাহত হয়েছে বলেও জানিয়েছিল তারা।