চীন সরকারের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে আগামী ২০ বছরের মধ্যে দেশটির দক্ষিণের শিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেতে পারে বলে নতুন এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে।
Published : 07 Jun 2021, 10:44 PM
জার্মানির গবেষক আদ্রিয়ান জেনজ এই বিশ্লেষণে বলেন, আঞ্চলিক নীতির কারণে এ সময়ের মধ্যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা ২৬ লাখ থেকে ৪৫ লাখ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
চীন গত সপ্তাহে দেশে জন্মহার কমতে থাকার মধ্যে দম্পতিদের তিন সন্তান নিতে দেওয়ার নতুন নীতি ঘোষণা করেছে।
কিন্তু উইঘুর অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশের ফাঁস হওয়া কিছু নথি ও সাক্ষ্য থেকে দেখা গেছে, সেখানে একেবারেই বিপরীত নীতি চালু আছে। কোনও নারী জন্মনিয়ন্ত্রণের কোটা পার করলে তাকে আটক করা হচ্ছে বা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পশ্চিমা অনেক দেশের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে চীন সরকার শিনজিয়াংয়ে গণহত্যা চলাচ্ছে। সেখানে নারীদের জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হচ্ছে।
চীন অবশ্য ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে বলে আসছে যে, অন্য কারণে সেখানে জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে।
শিনজিয়াংয়ে উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর চীনের দমন পীড়নের ফলে জনসংখ্যার ওপর যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে জেনজই প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনও পর্যালোচনাপত্র প্রকাশ করলেন।
পর্যালোচনাপত্রে তিনি দেখান, ওই অঞ্চলে চীনের জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে দক্ষিণ শিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০৪০ সাল নাগাদ ৮৬ লাখ থেকে ১ কোটি ৫ লাখে পৌঁছাবে। পূর্বের অনুমানে যা ১ কোটি ৩২ লাখ হবে বলা হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জেনজ বলেন, ‘‘এ গবেষণা এবং পর্যালোচনা উইঘুর জনগোষ্ঠী নিয়ে চীন সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পেছনের উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে।”
জেনজ তার গবেষণাপত্রে লেখেন, ২০১৯ সালে শিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ দক্ষিণের চারটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির অন্তত ৮০ শতাংশ সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীদের অস্ত্রপচারের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণের পরিকল্পনা করেছে।
এছাড়া, শিনজিয়াংয়ের প্রায় ১০ লাখ উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের আটকে রাখা হয়েছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জেনজের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, চীন সরকারের নতুন জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করা হলে দক্ষিণ শিনজিয়াংয়ে হান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ার কথা। সেখানে উইঘুর জনগোষ্ঠীর ঘনত্বও বর্তমানে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ২০৪০ সাল নাগাদ ২৫ শতাংশে পৌঁছানোর কথা।
চীন গত সপ্তাহে তাদের নতুন তিন-সন্তান নীতি ঘোষণা করে। কারণ, দেশটির সর্বশেষ আদমশুমারিতে দেখা গেছে, সেখানে জন্মহার দ্রুত কমছে। যার ফলে একসময় মোট জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর তাই জন্মহার বাড়াতে চীন দুই সন্তান নীতি থেকে সরে এসেছে।