নতুন কৃষিসংস্কার বিল বাতিলের দাবিতে ভারতের পাঞ্জাব থেকে হাজারো কৃষক রাজধানী দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করেছেন। তাদের দাবি নতুন ওই বিলগুলো তাদের স্বার্থ বিরোধী।
Published : 27 Nov 2020, 12:43 PM
পাঞ্জাব থেকে যাত্রা শুরুর পর বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী হরিয়ানা রাজ্যে পৌঁছে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন কৃষকরা। সারাদিন ধরেই হরিয়ানা পুলিশ বিভিন্ন ভাবে বিক্ষোভরত কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বেলা যত গড়াতে থাকে পুলিশের বাধা বাড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। কৃষকরা পুলিশকে ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে। অন্যদিকে, পুলিশ কৃষকদের চলে যেতে বলে। কিন্তু কৃষকরা পিছিয়ে যেতে রাজি নন। যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার পর শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।
রাত ১১টার দিকে হরিয়ানার সোনপতে প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যে পুলিশ কৃষকদের বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহার করে বলে জানায় কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার।
গত সেপ্টেম্বরে ভারতের পার্লামেন্টে তিনটি কৃষিসংস্কার বিল পাশ হয়।
যার প্রথমটিতে সরকার নিয়ন্ত্রিত পাইকারি কৃষিবাজারগুলো কার্যত বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিলটি ফসলের আগে থেকে ঠিক করে রাখা দামে চুক্তিভিত্তিক চাষ বা কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ের পথ প্রশস্ত করবে।
আর ব্যবসায়ী বা উৎপাদকরা কতটা ফসল মজুদ করতে পারবেন তার উপর সরকারি যে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বর্তমান আছে তৃতীয় বিলে সেটা বিলোপ হয়ে যাবে।
কৃষকদের দাবি, নতুন এই বিলগুলো তাদের স্বার্থ বিরোধী। কারণ, নতুন বিলে প্রাইভেট ফার্মগুলো কৃষিখাতে চালকের ভূমিকায় চলে যাবে। কৃষকদের হাতে আর কিছুই থাকবে না। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিবিসি জানায়, কৃষকদের দুইটি সংগঠন শুক্রবার এক বিবৃতিতে হরিয়ানা থেকে প্রায় ৫০ হাজার কৃষক বিক্ষোভে যোগ দিতে দিল্লি সীমান্তে জড়ো হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছে।
তাদের আটকাতে প্রস্তুত হয়ে আছে প্রশাসনও। দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে নিরাপত্তা নজরদারির জন্য ড্রোন ক্যামেরা মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কৃষকদের বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিওতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব হয়ে গেছে।
কয়েকটি ছবিতে কৃষকদের ট্রাক্টরে চড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায়। আরেকটি ছবিতে কৃষকদের হরিয়ানায় একটি সেতুর উপর থেকে পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দিতে দেখা যায়।
#WATCH Haryana: Police use water cannon & tear-gas shells in Karnal to disperse farmers from Punjab heading towards Delhi.
Security increased further at Delhi-Karnal Highway as farmers intensify their protest by trying to break through barricades & move towards Delhi. pic.twitter.com/5xyCelzRWc
— ANI (@ANI) November 26, 2020
কৃষকরা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত সরকার ওই তিনটি কৃষিসংস্কার বিল বাতিল না করবে ততদিন পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ভারতে বেশিরভাগ কৃষক তাদের ফসলের একটি বড় অংশ সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম দামে (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইজ-এমএসপি) সরকার নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন।
তাদের আশঙ্কা, নতুন বিলের ফলে এমএসপি-র অস্তিত্ব থাকবে না এবং ব্যবসায়ীদের হাতে ফসলের দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা চলে যাবে। ফলে তারা ফসলের ন্যায্যদাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অবশ্য বলছে, কৃষকদের এই আশঙ্কা অমূলক। বরং কৃষিখাতে উৎপাদন ও আয় বাড়াতে এই সংস্কার জরুরি।
অনেক রাজ্যেই কৃষকরা আগে থেকে ব্যক্তিমালিকানাধীন আড়তে তাদের ফসল বিক্রি করেন। ওই তিন বিলের মাধ্যমে পুরো দেশে এ বিষয়ে একটি জাতীয় কাঠামো নির্ধারিত হবে।