আত্মহত্যায় প্ররোচনা: ভারতের অর্ণব গোস্বামী জামিন পাননি

আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ভারতের রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীর জামিন আবেদন বাতিল করে দিয়েছে মুম্বাই হাই কোর্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2020, 01:20 PM
Updated : 9 Nov 2020, 01:20 PM

দুই বছর আগের এ মামলায় মহারাষ্ট্রের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত ৪ নভেম্বর অর্ণবকে তার মুম্বাইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রথমে আলিবাগ থানায় এবং পরে আদালতে হাজির করা হয়।

৪৭ বছরের অর্ণবের স্টুডিওর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার অন্বয় নায়েক ও তার মা কুমুদ নায়েক ২০১৮ সালের মে মাসে আত্মহত্যা করেন। এই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলাতেই সোমবার অর্ণবকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়নি মুম্বাই হাইকোর্ট।

অর্ণবের গ্রেপ্তারের সময় ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছিল, টিআরপি কেলেঙ্কারি নিয়ে তার বিরুদ্ধ তদন্ত চলার সময় তিনি ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন।

বিবিসি জানায়, অর্ণবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অন্বয় নায়েকের পাওনা পরিশোধ করেননি। তা নিয়ে হতাশা থেকেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। অন্বয়ের স্ত্রী পুলিশকে এ কথা জানিয়ে আরও বলেছেন, অন্বয় যে ‘সুইডাইট নোট’ রেখে গেছেন সেখানেও ‘তার মৃত্যুর জন্য অর্ণবকে দায়ী করে গেছেন’।

রিপাবলিক টিভি কর্তৃপক্ষ অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অর্ণবের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতীয়রা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, এ গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ প্রণোদিত।

বিবিসি জানায়, রোববার রিপাবলিক টিভিতে একটি ভিডিও সম্প্রচার করা হয়েছে। যেখানে অর্ণবকে একটি পুলিশ ভ্যানের ভেতর থেকে চিৎকার করতে দেখা যায়। চিৎকার করে তিনি বলছিলেন, আগের দিন সন্ধ্যায় ‘একজন কারা কর্মকর্তা’ তার উপর ‘হামলা’ করেছেন। সেখানে তিনি জীবননাশের হুমকিতে রয়েছেন এবং তাকে তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।

গ্রেপ্তারের পর অর্ণবকে প্রথমে একটি অস্থায়ী কারাগারে রাখা হয়। সেখানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল ‘নেগিটিভ’ আসার পর সেখান থেকে তাকে পুলিশ ভ্যানে করে করাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ওই অভিযোগ করেন।

অন্বয়ের লেখা সুইসাইড নোটে অর্ণব গোস্বামী ছাড়া আরও ২ জনের নাম ছিল। তারা হলেন ফিরোজ শেখ ও নীতেশ সারদা। এ তিনজন তার প্রাপ্য ৫ কোটি ৪০ লাখ রুপি না দেওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন অন্বয়।

অন্বয় ছিলেন কনকর্ড ডিজাইনার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তার মা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

অন্বয় ও তার মায়ের আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ২০১৮ সালে আলিবাগ পুলিশ একটি মামলা করে।

আলিবাগের পুলিশ ‘অর্ণব গোস্বামীর রিপাবলিকের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা না দেওয়ার’ বিষয়টি তদন্ত করে দেখেনি বলে অন্বয়ের মেয়ের অভিযোগ পাওয়ার পর চলতি বছরের মে মাসে মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ এক ঘোষণায় সিআইডি মামলাটি নতুন করে তদন্ত করবে বলে জানান।

অর্ণবকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মহারাষ্ট্রে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, “মহারাষ্ট্রে আইন মানা হয়। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।”

দ্য এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া থেকে প্রশাসনের কাছে অর্ণবের প্রতি ‘ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার’ ‍দাবি জানানো হয়েছে। বলেছে, ‘‘সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়া সংবেদনশীল প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করা উচিত না।”