ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ‘চুক্তির’অনুষ্ঠান হোয়াইট হাউসে

স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনি জনগণের কয়েক দশকের সংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 08:21 AM
Updated : 15 Sept 2020, 08:21 AM

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসে তিন দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে।

এ চুক্তির মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর কৌশলগত সখ্যতার বিষয়টিও আরও স্পষ্ট হবে মনে করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে হোয়াইট হাউসে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে নাটকীয় একটি মাসের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে; যে মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন কয়েক দশকের বিরোধ নিষ্পত্তি ছাড়াই  প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পরে বাহরাইন তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়।

ট্রাম্পের উদ্যোগে আয়োজিত মঙ্গলবারের এ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ আল জায়ানি নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।

এই চুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবে। এর আগে ১৯৭৯ সালে মিশর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরোধিতা ও তীব্র প্রতিবাদের মুখেও মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুটি আরব দেশের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা ট্রাম্পের অভাবনীয় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রেসিডেন্ট তার মেয়াদের পুরোটা সময়জুড়েই এ ধরনের কূটনৈতিক সফলতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

এজন্য উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎও করেছেন তিনি, যদিও পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে কার্যকর কোনো সমাধানে তিনি পৌঁছাতে পারেননি।

ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ‘শান্তি চুক্তি’ ৩ নভেম্বর হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইসরায়েলপন্থি অ্যাভেঞ্জেলিকাল খ্রিস্টানদের ভোট টানতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রিপাবলিকান ঘাঁটিগুলোতে জয় নিশ্চিত করতে এ ভোটারদের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের জন্যও এ চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ভেতর দিয়ে দেশদুটি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার এবং তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিকাশ নিয়ে তাদের যৌথ উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল বলেও ধারণা অনেকের।

ইরান শুরু থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে।

“অতীতের সংঘাতের দিকে নজর না দিয়ে মানুষ এখন অন্তহীন সম্ভাবনায় ভরা প্রাণবন্ত ভবিষ্যতের দিকে নজর দিচ্ছে,” সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার।

ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কার স্বামী কুশনারই তেল আবিবের সঙ্গে দুই আরব দেশের চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছেন। তিনি আরও আরব দেশকে ইসরায়েলের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তিতে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।

তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে হোয়াইট হাউস এখন ওমানকে রাজি করাতে চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশটির সুলতানের সঙ্গে ট্রাম্পের কথাও হয়েছে।

মার্কিন প্রশাসনের ‘টার্গেটে’ উপসাগরের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব থাকলেও রিয়াদ এখনই তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থানে ‘প্রস্তুত নয়’ বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।

আরও পড়ুন: