শনিবারের হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার এ বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের ছবি পোড়ায় ফিলিস্তিনিরা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে শুক্রবার এক ঘোষণায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের পদক্ষেপ অনুসরণের ঘোষণা দেয় বাহরাইন।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ইরানকে ঠেকাতে সৌদি আরবের মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত এ দেশ দুটো তেল আবিবের সঙ্গে হাত মেলাতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে তাদের এ পদক্ষেপ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবিতে কয়েক দশক ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদেরকে আরও বিপাকে ফেলবে বলে অনুমান পর্যবেক্ষকদের।
গাজায় বিক্ষোভটি আয়োজন করেছিল ভূখণ্ডটির নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস।
“সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে আমাদের; এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এটির সফল হওয়ার সব পথও রুদ্ধ করে দিতে হবে,” বলেছেন হামাস কর্মকর্তা মাহের আল-হোলি।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, বাহরাইনের বাদশা হামাদ বিন ইসা আল খলিফা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতভু্ক্ত আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ছবিতে আগুন দিয়েছে।
রয়টার্স বলছে, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সম্পর্ক স্বাভাবিকের এ কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মনে করলেও ফিলিস্তিনিরা একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছে।
তাদের ভয়, এভাবে একের পর এক দেশ তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুললে ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্যান-আরব অঞ্চলের এতদিনকার শক্ত অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।
আরব দেশগুলো এতদিন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া এবং দখল করা অংশগুলো ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলে আসছিল।
দুই উপসাগরীয় দেশের তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা ফিলিস্তিনের বিবদমান দুটি পক্ষ প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) ও হামাসকেও এক করেছে। ২০০৭ সালে এই দুই অংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল।
ইসরায়েলের দখল করা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষের সীমিত শাসন বিদ্যমান; অন্যদিকে গাজার নিয়ন্ত্রণ আছে হামাসের হাতে।
পিএলও’র সাধারণ সম্পাদক সায়েব এরাকাত বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা কখনোই শান্তি আনবে না, যদি না প্রথমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের কয়েক দশকের দ্বন্দ্বের সমাধান হয়।
“সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাহরাইন,ইসরায়েল ও আমেরিকানদের চুক্তি এই অঞ্চলকে ঘিরে বড় একটি প্রকল্পের অংশ। এটা শান্তি কিংবা দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের বিষয় নয়। আমরা এই অঞ্চলে একটি জোট, একটি সামরিক জোটের উত্থান দেখছি,” রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন এরাকাত।
অন্যদিকে ইরান বলেছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণার মাধ্যমে বাহরাইন ইসরায়েলের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী হল, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
শনিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।