বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের কথিত এসব মন্তব্য নিয়ে আটলান্টিক সাময়িকী প্রথম প্রতিবেদন করার পর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও ফক্স নিউজ আরও কিছু বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ বিষয়টি নিশ্চিত করে।
কিন্তু তিনি এসব মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার মিত্ররা।
আটলান্টিকের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্যারিসের কাছে যুদ্ধে নিহত আমেরিকানদের একটি কবরস্থান পরিদর্শন বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প, তখন তিনি বলেছিলেন, ওই জায়গা ‘ব্যর্থদের দিয়ে পরিপূর্ণ’।
চারটি সূত্র এই সাময়িকীটিকে জানিয়েছেন, বৃষ্টিতে তার চুলের বিন্যাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং যুদ্ধে নিহত আমেরিকানদের সম্মান জানানো গুরুত্বপূর্ণ এটি তিনি বিশ্বাস করেন না, এমনটি জানিয়ে কবরস্থান পরিদর্শনের ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
একই সফরে ট্রাম্প প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের বেলিউ উডে নিহত ১৮০০ মার্কিন সৈন্যকে ‘বোকা’ বলে উল্লেখ করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বেলিউ উডের ওই যুদ্ধ প্যারিসের দিকে জার্মান বাহিনীর অগ্রগতি রুখে দিয়েছিল, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মেরিন কোর অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখে।
আটলান্টিকের প্রতিবেদন বেনামি সূত্রের ভিত্তিতে করা হলেও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, তারা ট্রাম্পর ওই সব মন্তব্যের অনেকগুলোই স্বাধীনভাবে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে। ফক্স নিউজের একজন সংবাদাতাও ওই মন্তব্যের কয়েকটি নিশ্চিত করার কথা জানান।
২০১৮ সালে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছিল, খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার উড়তে না পারায় কবরস্থান পরিবদর্শন বাতিল করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সাম্প্রতিক এক বইয়েও হোয়াইট হাউসের ওই বক্তব্যকে সমর্থন করা হয়েছে। বোল্টন এখন ট্রাম্পের সরব সমালোচকদের একজন হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের আওতায় বাজফিডের প্রতিবেদক জ্যাসন লিওপোল্ডের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীও জানিয়েছে, বৃষ্টির কারণেই কবরস্থানে যাওয়ার সূচীটি বাতিল করেছিল তারা।
কিন্তু প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধ অভিজ্ঞ প্রবীণ আমেরিকান সেনাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীসহ অনেকেই ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
মন্তব্যকারী প্রবীণদের মধ্যে শীর্ষে থাকা, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃত্ব দেওয়ার ‘অযোগ্য’।
“প্রতিবেদনটি যদি সত্যি হয়-আর তিনি অন্য যা যা বলেছেন তার ভিত্তিতে এটিকে সত্য বলেই মনে হচ্ছে- এটি পুরোপুরি জঘন্য। এটি মর্যাদাহানিকর,” বলেছেন তিনি।
ইরাক যুদ্ধে দুই পা হারানো ডেমোক্র্যাট সিনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থ বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নিজের অহমের জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।”
প্রগতিশীল গোষ্ঠী ভোটভেটস যেসব পরিবারের সন্তানরা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন তাদের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে, সেখানে একজন বলেছেন, “ত্যাগ কী জিনিস তুমি তা জানো না।”
এসব প্রতিবেদনকে ট্রাম্প ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়ে এরজন্য সাবেক মার্কিন মেরিন জেনারেল ও হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলিকে দায়ী করেছেন।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পুনর্নির্বাচিত হতে প্রেসিডেন্টের সামরিক বাহিনীর ভোটারদের সমর্থন দরকার কিন্তু তার এসব মন্তব্য তার জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।