দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে এ বছরের শুরুতে রাজধানী দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতার সময় পুলিশের ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2020, 03:46 PM
Updated : 28 August 2020, 04:03 PM

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের মারধর,আটককৃতদের নির্যাতন এবং হিন্দুদের সঙ্গে দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে পুলিশ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারির দাঙ্গায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের। তবে হিন্দুরাও দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। 

গত কয়েক দশকের মধ্যে এত রক্তপাত দেখেনি দিল্লি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘ওই দাঙ্গা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল বলে মনে হয়নি। দাঙ্গায় হিন্দুদের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেশি মুসলিম হতাহত হয়েছে। মুসলমানদের বাড়িঘর, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও আগুন দেওয়া হয়।”

‘‘তবে হিন্দুরাও একেবারে ছাড় পায়নি। মুসলমানদের তুলনায় সংখ্যায় বেশ কম হলেও হিন্দুদের উপরও হামলা হয়েছে।”

গত বছর সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) পাশ হওয়ার পর সমালোচকরা একে মুসলিম বিরোধী আইন আখ্যা দেয় এবং এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।

দ্রুতই ওই বিক্ষোভ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয় এবং টানা তিনদিন ধরে দাঙ্গা চলে। উগ্রবাদী হিন্দুরা দল বেঁধে মুসলমানদের বাড়িঘর ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ফেব্রুয়ারির ওই দাঙ্গায় পুলিশের দুষ্কর্ম ও নির্মমতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অ্যামনেস্টির তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি আরও সুনিশ্চিত হল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তাদের কাছে থাকা কয়েকটি ভিডিওতে দাঙ্গার সময় পুলিশকে নীরব ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থাকতে এবং দাঙ্গাকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে দিতে দেখা গেছে।

হিন্দুত্ববাদী নেতারা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা, দাঙ্গার উস্কানি দিলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পুলিশ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে। যাদের অধিকাংশই মুসলমান।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দিল্লিতে দাঙ্গার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

‘দিল্লি মাইনোরিটিস কমিশন’ এর প্রতিবেদনেও দাঙ্গার সময় পুলিশ হিন্দু উগ্রবাদীদের না আটকে বরং তাদের মুসলমানদের বাড়িঘর ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের সুযোগ করে দেওয়ার আভিযোগ তোলা হয়েছে।

দিল্লি পুলিশ কর্তৃপক্ষ এখনও অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তারা শুরু থেকেই বিক্ষোভ দমনে বেআইনি কিছু না করার দাবি করে আসছে।