দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের ভূমিকা নিয়ে ‘গভীর অনুশোচনা’ প্রকাশ করেছেন দেশটির সম্রাট নারুহিতো।
Published : 15 Aug 2020, 11:01 PM
ওই যুদ্ধে তার দেশের আত্মসমর্পণের ৭৫ বছর পূর্তিতে তিনি এ অনুপাত প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
“আমি আন্তরিকভাবে আশা করছি আর কখনোই যুদ্ধের ওই ধ্বংসযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না,” যুদ্ধে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শনিবার রাজধানী টোকিওতে আয়োজিত এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাখা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন তিনি।
আর এই ‘শোকাবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনোই ঘটবে না’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
“শোকাবহ যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি আর করা হবে না। আমরা এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবো,” বলেন ফেইস মাস্ক পরা আবে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার আয়োজনের পরিসর সংক্ষিপ্ত ছিল। গতবার যেখানে ছয় হাজারেরও বেশি লোক উপস্থিত ছিলেন সেখানে এবার প্রায় ৫০০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে ফেইস মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল।
এর আগে ফুল দিয়ে সাজানো একটি অংশের সম্মুখে একটি বেদির দিকে একসঙ্গে মাথা নত করে সম্মান জানান নারুহিতো ও তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মাসাকো। তারা উভয়েই ফেইস মাস্ক পরা ছিলেন।
৬০ বছর বয়সী নারুহিতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাপানের সম্রাট হিরোহিতোর নাতি। নারুহিতো ওই যুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া জাপানের প্রথম সম্রাট। গত বছর তার বাবা আকিহিতো সিংহাসন ছেড়ে দেওয়ার পর উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি তাতে আরোহণ করেন।
জাপানের আত্মসমর্পণের দিনটিতে যুদ্ধের মৃতদের উদ্দেশ্যে নির্মিত টোকিওর বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে নৈবদ্য পাঠান জাপানের প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু তিনি নিজে সেখানে যাননি। কিন্তু তার মন্ত্রিসভার চার জন মন্ত্রী ওই মন্দিরে যান, এতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া ক্ষুব্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
চার বছরের মধ্যে এই প্রথম এই পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরা ওই মন্দির পরিদর্শনে গেলেন। তারা যুদ্ধে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাপানের ১৪ জন নেতার স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা জানান বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জাপান ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কোরিয়া উপদ্বীপকে উপনিবেশ করে রেখেছিল। আর জাপান সাম্রাজ্যের বাহিনী ১৯৩১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চীনের বেশ কিছু অংশ দখল করে রেখেছিল।
১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যের পার্ল হারবার নৌঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর পক্ষে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ অগাস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের কয়েকদিনের মধ্যে ১৫ অগাস্ট সম্রাট হিরোহিতো রেডিওতে প্রথমবারের মতো যুদ্ধ শেষ করার ঘোষণা দেন। এরপর ২ সেপ্টেম্বর দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে।