চীনের বিউবোনিক প্লেগে বেশি ঝুঁকি নেই: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, চীনের উত্তরাঞ্চলীয় ইনার মঙ্গলিয়ায় বিউবোনিক প্লেগ ধরা পড়ার ঘটনাটি সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে এই প্লেগ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

>>রয়টার্স
Published : 7 July 2020, 06:52 PM
Updated : 7 July 2020, 06:52 PM

গত শনিবার ইনার মঙ্গোলিয়ার বায়ান্নুর শহরে প্রথম এক পশুপালকের বিউবোনিক প্লেগ ধরা পড়ার পর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ।

রোগ শনা্ক্ত হওয়া ওই ব্যক্তি হাসপাতালে স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।রোগটিকে ভালভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচ’র মুখপাত্র।

বিবিসি জানায়, বিউবোনিক প্লেগ এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে আতঙ্কজনক রোগ ছিল, কিন্তু এখন এ রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য।

কী বলছে ডব্লিউএইচও?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, “বিউবোনিক প্লেগ আমাদের সঙ্গে ছিল, শত শত বছর ধরে সবসময় আমাদের সঙ্গেই আছে। আমরা চীনে এ রোগ শনাক্তের সংখ্যার দিকে নজর রাখছি। রোগটি ভালভাবেই সামাল দিয়ে রাখা হচ্ছে।”

“এই মূহূর্তে আমরা এই প্লেগের উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি আছে বলে মনে করছি না। তবে আমরা এর ওপর নজর রাখছি, পর্যবেক্ষণ করছি।”

প্লেগ আক্রান্ত পশুপালককে বায়ান্নুর হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে সোমবার খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

চীনের সিনহুয়া বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে আরো দুইজনের প্লেগ আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে মঙ্গোলিয়া। দুইজনই পার্বত্য ইঁদুর বা মারমেট এর মাংস খেয়েছিল।

আলতাই পর্বত অঞ্চলে রুশ কর্মকর্তারা মানুষজনকে মারমেট শিকার না করার ব্যাপারে সতর্ক করছেন।

বিউবোনিক প্লেগ কি?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিউবোনিক প্লেগ ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ। ইঁদুর বা এ জাতীয় প্রাণীর মৃতদেহ এবং মল-মূত্র থেকে মাছি বাহিত হয়ে মানুষের দেহে এ ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করে।

এ রোগের লক্ষণ প্রবল জ্বর, শীতের অনুভূতি, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা এবং ঘাড়, বগল ও কুঁচকির লাসিকাগ্রন্থি ফুলে ব্যথা হওয়া।

‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত মানবজাতির ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী মহামারীর জন্য দায়ী এই বিউবোনিক প্লেগ। ১৪ শতকে আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারী প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল।

তারপর থেকে বেশ কয়েকবার এই রোগের বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। ১৬৬৫ সালের ‘গ্রেট প্লেগ’ এ লন্ডনের এক-পঞ্চমাংশ মানুষ মারা যায়।

আর ঊনবিংশ শতকে চীন ও ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাদুর্ভাবে এক কোটি ২০ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। আজকাল এন্টিবায়োটিক দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়।

আরেকটি মহামারী কি হতে পারে?

বিউবোনিক প্লেগ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। তবে সময়ে সময়ে এখনও এর প্রাদুর্ভাব ঘটে চলেছে।

২০১৭ সালে মাদাগাস্কারে ৩ শ’র বেশি জনকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছিল। তবে মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ এর গবেষণায় দেখা গেছে, এতে ৩০ জনেরও কম মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গতবছর মে মাসে মঙ্গোলিয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে মারমেটের মাংস খেয়ে। তবে প্লেগ সংক্রমণের কোনও ঘটনা থেকে মহামারী দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

“১৪ শতকের পরিস্থিতি এখন নেই। রোগটি কিভাবে সংক্রমিত হয় তা এখন আমরা জানি। কিভাবে তা প্রতিরোধ করতে হয় তাও জানি”, নিউজ সাইট হেলথলাইনকে একথা বলেছেন ‘স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ার’ এর সংক্রামক রোগের এক চিকিৎসক।