গত বছর ইস্টার সানডের পরবে গির্জা ও হোটেলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করেছে শ্রীলঙ্কা।
Published : 21 Apr 2020, 05:44 PM
নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে মার্চ থেকে দেশটিতে কারফিউ জারি থাকায় ওই নারকীয় হামলার বছরপূর্তি উপলক্ষে দেশটিতে বড় ধরনের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হামলার বছরপূর্তিতে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টার দিকে দেশজুড়ে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
গত বছর ২১ এপ্রিল এ সময়েই প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয়; এর কিছু সময়ের মধ্যে আরও কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে বোমা বিস্ফোরিত হয়। ওই হামলায় আড়াইশর বেশি লোক নিহত হয়।
দেশজুড়ে নীরবতা পালনের সময় শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সম্প্রচারও দুই মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে কোনো অনুষ্ঠান না হলেও হামলার বর্ষপূর্তিতে গির্জায় গির্জায় ঘণ্টা বাজিয়ে নিহতদের স্মরণ করা হয়। ওই নৃশংসতা যে পরিবারগুলোর জীবন বদলে দিয়েছিল, তারাও নীরবে দিনটিকে স্মরণ করেছে, জানিয়েছে বিবিসি।
হামলায় বেঁচে যাওয়াদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে একটি অনুষ্ঠান হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। নিহতদের স্মরণে দুটি স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন ও গির্জায় বেশ কয়েকটি স্মরণ অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা থাকলেও সেগুলি হয়নি।
গির্জা আত্মঘাতী হামলাকারীদের ‘অন্তর থেকে ক্ষমা’ করে দিলেও, তাদের সমর্থকদের আইনের আওতায় আনা উচিত, বছরপূর্তিতে বলেছেন কলম্বোর আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রনজিৎ।
১২ মাস আগের ওই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ইস্টারের উৎসবে অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় ঘুরতে যাওয়া অনেক পর্যটকও নিহত হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বিদেশি নাগরিকও ছিলেন।
কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি গির্জায় সন্ত্রাসীদের হামলায় সেদিন ২৫ বছর বয়সী সারন্যর স্বামী নিহত হয়েছিলেন। তার পরদিনই এক পুত্রের জন্ম দেন এ নারী।
“আমার স্বামী তার ছেলেকে দেখতে পেল না। ২২ তারিখে আমার সন্তানের এক বছর হবে, কিন্তু কিভাবে আমরা এদিন উদযাপন করবো। এটা যে তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর পরদিন। আমাদের জন্য খুবই দুঃখের দিন,” বলেন সারন্য।
কলম্বোর কাছে নেগোম্বোর সেইন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় একইদিনের হামলায় স্বামী-সন্তানকে হারিয়েছিলেন আনুশা কুমারিও।
“আমার স্বামী আর দুই সন্তান মারা গেছে একবার, আর আমি প্রতিটি সেকেন্ডে মরছি,” চলতি বছরের প্রথমদিকে বিবিসিকে এমনটাই বলেছিলেন এ নারী।
এক বছর আগের ওই হামলা নিয়ে শ্রীলঙ্কায় এখনো তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। হামলার বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে সতর্ক করলেও শ্রীলঙ্কার তখনকার সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নজর দেয়নি এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহিত করেনি বলে দেশটির পার্লামেন্টে আলোচনাও হয়েছে।
“নির্বাচিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ সরকারের কয়েক ডজন কর্মকর্তা ওই সতর্কতা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে অবগত ছিলেন, এবং তারা তা খতিয়ে দেখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এটি বিবেকবর্জিত কাজ হয়েছে,” বলেছেন সেদিনের সন্ত্রাসী হামলায় সিনামন গ্রান্ড হোটেলে নিহত ১১ বছর বয়সী কিরানের মা ধুলসিনা দে জয়সা।
“আমরা যে জীবন থেকে মূল্যবান কিছু হারিয়েছি, তার কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। কিছু পাইনি আমরা, এমনকি সহমর্মিতাও না,” বলেছেন তিনি।
ইস্টারের পরবে ওই হামলার জন্য শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতকে দায়ী করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটও (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল।