কিমের ‘গুরুতর অসুস্থতার’ খবর, প্রত্যাখ্যান দক্ষিণ কোরিয়ার

হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ‘গুরুতর অসুস্থ’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যে খবর এসেছে তা সত্য নয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2020, 09:52 AM
Updated : 21 April 2020, 09:52 AM

গত সপ্তাহে দাদা কিম ইল সুংয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার পর থেকেই কিমের স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছিল।

পক্ষত্যাগী উত্তর কোরীয়দের একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সিএনএনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে পারে’ বলে গুঞ্জন উঠে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা খবরটি পর্যালোচনা করে দেখছেন বলেও জানায় তারা।

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে কিমের ‘অবস্থা আশঙ্কাজনক’, তার ‘মস্তিষ্ক কাজ করছে না’ কিংবা তিনি ‘অস্ত্রোপচার থেকে সেরে উঠছেন’ এমন শিরোনামের প্রতিবেদনগুলোর তথ্য যাচাই ‘কার্যত অসম্ভব’ বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, ৩৬ বছর বয়সী কিম ‘গুরুতর অসুস্থ’ উত্তরের দিক থেকে এমন সুনির্দিষ্ট কোনো ইঙ্গিতই পাওয়া যায়নি।

উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার শারিরীক অবস্থা নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন সত্য নয়, চীনা গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন সূত্রও একই দাবি করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কিম সর্বশেষ ১১ এপ্রিল গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানায় উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম; পরদিন তাদের দেয়া তারিখবিহীন একটি ছবিতে উত্তরের শীর্ষনেতাকে বরাবরের মতোই হাসিখুশি ও উচ্ছ্বল দেখা গেছে।

কিন্তু এরপর থেকেই কিমের আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় তিনি উপস্থিত ছিলেন কিনা, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তারও কোনো তথ্য মেলেনি।

সাধারণত এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কর্মসূচিতে কিমের সশরীরে উপস্থিতির কথা দেশটির গণমাধ্যম ফলাও করে জানায়।

বুধবার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানেও কিম ছিলেন না; এর আগে কখনোই দাদার জন্মদিনের বর্ণিল অনুষ্ঠানে কিমকে অনুপস্থিত দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামুলি কোনো কারণে কিম সেদিন জনসমক্ষে আসতে চাননি, এমনটা মনে হচ্ছে না।

গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে না থাকা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বেশ কয়েকদিন ধরে তার অনুপস্থিতি কিমের স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা উসকে দেয়। মঙ্গলবার পক্ষত্যাগী উত্তর কোরীয়দের একটি ওয়েবসাইট ওই গুঞ্জনে আরও রসদ যোগায়। 

অজ্ঞাত এক সূ্ত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি এনকে জানায়, গত বছরের অগাস্ট থেকেই কিম যে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তা বোঝা যাচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মাউন্ট পেকটু কয়েকবার সফর করার ফলে ওই সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে’ বলেও জানায় তারা।

ডেইলি এনকে’র ওয়েবসাইটের বরাত দিয়েই পরে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সব গণমাধ্যমের প্রতিবেদন হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর ‘কিম গুরুতর অসুস্থ’ বলে জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, তারা কিমের অসুস্থতার খবর পেলেও তা গুরুতর কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেননি।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় ‘ব্যাপক গোপনীয়তা’ বজায় রাখা উত্তর কোরিয়ায় যে কোনো তথ্য যাচাই এমনিতেও কঠিন; তার উপর নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কিম জানুয়ারির শেষদিকেই সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের কর্মকর্তারা পরে কিমের ‘গুরুতর অসুস্থতার’ তথ্যকে ‘গুজব’ বলে অভিহিত করলেও উত্তরের শীর্ষ নেতার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের তথ্য অস্বীকার করেননি বলে বিবিসি জানিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ডেইলি এনকে’র প্রতিবেদনে কিমের অসুস্থতার জন্য ‘অত্যধিক ধূমপান, স্থূলতা ও প্রচুর পরিশ্রমকে’ দায়ী করা হয়েছে বলে জানায় সিএনএন। ৩৬ বছর বয়সী এ শীর্ষ নেতা পূর্বসূরীদের মতোই হায়াংসাং কাউন্টিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও দাবি করে তারা।

অস্ত্রোপচারের পর কিম ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং তার দেখভালে থাকা চিকিৎসকদের বিরাট অংশ পিয়ংইয়ংয়ে ফিরে এসেছেন বলেও জানায় ডেইলি এনকে। প্রতিবেদনের এসব তথ্য সিএনএন যাচাই করতে পারেনি।

বিবিসি বলছে, কিমের অনুপস্থিতিতে জল্পনা-কল্পনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে টানা ৪০ দিন তার দেখা না পাওয়ায় কিমকে উৎখাত করা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠলেও পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

কিমের কিছু হলে তার বোন কিম ইয়ো-জং দায়িত্ব নিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসক কিম জং ইলের এ মেয়েকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সফর ও সম্মেলনে ভাইয়ের পাশে নিয়মিতই দেখা যায়।