ইহুদি বসতি সংশ্লিষ্ট শতাধিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিল জাতিসংঘ

ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2020, 08:32 AM
Updated : 13 Feb 2020, 08:32 AM

দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এ প্রতিবেদনে যে ১১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে তার মধ্যে এয়ারবিএনবি, বুকিং ডটকম, এক্সপেডিয়া গ্রুপ ও মটোরোলা সল্যুশনের মতো কোম্পানিও আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই অবৈধ বসতির যোগসাজশ আছে, যৌক্তিক ভিত্তি থেকেই জাতিসংঘ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক এ সংস্থাটির মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)।

বুধবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের বিজয়’ অ্যাখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিনিরা। অন্যদিকে ইসরায়েলিরা একে বলেছে ‘লজ্জাজনক’।

১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর থেকে সেখানে এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠা ১৪০টির মতো বসতিতে প্রায় ৬ লাখ ইহুদি বসবাস করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। এ বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে ‘অবৈধ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এলেও ইসরায়েল সবসময় তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে।

ইহুদি বসতি ও স্থাপনা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন রাষ্ট্রকে বাস্তবে রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরেই বসতিগুলোর উচ্ছেদ চাইছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বসতিগুলোতে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা বানাতে ওএইচসিএইচআর-কে দায়িত্ব দেয়।

যেসব কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে আছে- পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কাঁটাতার ও বসতির বিস্তৃতিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, সেখানে থাকা বাড়িঘর ও স্থাপনা, কৃষিজমি, গ্রিনহাউস, জলপাইয়ের বাগান ও শস্য ধ্বংসে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, বসতিগুলো টিকিয়ে রাখতে ও এর দেখভালের জন্য যাতায়াতসহ বিভিন্ন সেবা ও পরিষেবা নিশ্চিত করা, বসতিগুলোর আধুনিকায়ন, ব্যবস্থাপনা ও  বিস্তৃতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এমন ব্যাংকিং ও বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ড, যেমন গৃহ নির্মাণ ও ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া।

তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৪টিই ইসরায়েলভিত্তিক; বাকিগুলো যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের।

“এ বসতিগুলো আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এলেও (ওএইচসিএইচআরের) প্রতিবেদনে স্থান পাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কিংবা তাদের কর্মকাণ্ডকে আইনীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে না,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ইহুদি বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তালিকা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের দায়িত্ব মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর, বলছে বিবিসি।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি এ প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন।

“বসতিগুলোতে কর্মরত গোষ্ঠী ও কোম্পানিগুলোর তালিকাসম্বলিত এ প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক আইনের বিজয়,” বলেছেন তিনি।

তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোকে ইহুদি বসতিতে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধে নির্দেশনা জারি করতে মালিকি মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, কোনো দেশ এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে তেলআবিবও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।