বিধানসভা নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় ভোট দিচ্ছে দিল্লি

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে দুই মাসব্যাপী চলা ধারাবাহিক বিক্ষোভের মধ্যে ভারতের রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি ভোটার বিধানসভা নির্বাচনে তাদের রায় জানাচ্ছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2020, 04:32 AM
Updated : 11 Feb 2020, 10:32 AM

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ১৩ হাজারেরও বেশি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

অ্যাপ, কিউআর কোডসহ প্রযুক্তিনির্ভর এ নির্বাচনে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিরই (বিজেপি) মূল লড়াই হবে বলে বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে।

এএপির আগে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর ক্ষমতা দখল করে রাখা কংগ্রেসও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে; যদিও তাদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১০-১৫ শতাংশের বেশি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে দিল্লিকে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর যে পরিমাণ সদস্য মোতায়েন ছিল, এবার তার চারগুণ থাকছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা প্রবীণ রঞ্জন জানিয়েছেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম কেন্দ্র জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী শাহিনবাগের ৫টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সংবেদনশীল অন্যান্য এলাকার নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। 

দিল্লির প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা রণবীর সিং জানান, কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ভোটারদের কোনো ধরণের সমস্যাই হবে না।

ভোটের আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রায় ৭০০ প্রার্থী লড়ছেন।

নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি ও আম আদমি পার্টির নেতারা প্রতিশ্রুতির তুবড়ি ছুটিয়েছেন, প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেছেন কদর্য ভাষায়।

সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে ৭০ আসনের মধ্যে ৬৭টি জেতা কেজরিওয়ালের দলের জন্য এবার একইরকম ফল করা কঠিন হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ভোট খানিকটা বাড়লেও গত বছরের লোকসভায় দিল্লির ৭টি আসনের সবগুলোতে জেতা বিজেপির পক্ষেও বিধানসভা দখল করা কষ্টকর হবে বলেই মনে করছেন তারা।

নির্বাচনের প্রচারে গত কয়েকবছর ধরে নিজের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফলকে ঢাল বানিয়েছেন কেজরিওয়াল; ফের নির্বাচিত জলে রাজধানীর হাসপাতাল ও স্কুলগুলোর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি আছে তার।

অন্যদিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দেওয়ায় কেজরিওয়ালকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ খেতাব দিয়ে তাকে ছুঁড়ে ফেলতে দিল্লিবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিজেপি। একের এক ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দেওয়া আম আদমিপ্রধানকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছে তারা।

রাজধানীতে বিজেপির ব্যাপক ভোটব্যাঙ্ক থাকলেও বিজয়ী হলে কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল। এ কারণে দলটি খানিকটা পিছিয়ে পড়তে পারে বলেও অনুমান অনেকের।

কংগ্রেস প্রার্থীদের প্রচারেও রাহুল গান্ধী কিংবা প্রিয়ংকাকে কালেভদ্রে দেখা গেছে।

২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের দল ৫৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন কব্জা করেছিল। অবশ্য পরে এক উপনির্বাচনে তাদের একটি আসন বিজেপির কাছে হাতছাড়া হয়। দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগও দিয়েছিলেন ছয় বিধায়ক। 

দ্য টাইমস নাউ-ইপসোসের জনমত জরিপে আম আদমির পক্ষে ৫২ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের চিত্র মিলেছে। অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষে পড়েছে ৩৪ শতাংশের সমর্থন।

জরিপের এ আভাস নির্ভুল হলে এবার ৫৪ থেকে ৬০টি আসন জুটতে পারে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের । পদ্মফুলের বাক্সে যেতে পারে ১০ থেকে ১৪টি আসন।