করোনাভাইরাসে মৃত্যু বেড়ে ৩৬২, চীনে পুঁজিবাজারে ধস

চীনে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক, চন্দ্র নববর্ষের দীর্ঘায়িত ছুটির পর প্রথম দিনেই বড় ধসের কবলে পড়েছে পুঁজিবাজার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2020, 04:01 AM
Updated : 4 Feb 2020, 03:37 AM

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার একদিনেই নতুন করে ২ হাজার ৮২৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২০৫ জনে। আরও ৫৭ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে।

রোববারই চীনের বাইরে প্রথম এ ভাইরাসে মৃত্যু খবর আসে ফিলিপিন্স থেকে, তিনি চীনেরই একজন নাগরিক। সব মিলিয়ে   নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬২ জনে।

সিএনএন জানিয়েছে, চীনের বাইরে অন্তত ২৫টি দেশ ও অঞ্চলে অন্তত দেড়শ মানুষের দেহে এই করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। তাতে সব মিলিয়ে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

মৃত্যু ও সংক্রমণের অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে চীনের হুবেই প্রদেশে। এ প্রদেশের উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকেই গতবছরের শেষে এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়,যাকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস বা ২০১৯-এনসিওভি। চীনে এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০২ সালের সার্সের প্রাদুর্ভাবকেও ছাড়িয়ে গেছে। 

এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উহানসহ বেশ কয়েকটি শহর বার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে চীন। গণপরিবহন বন্ধ রাখায় ছয় কোটি মানুষের চলাচল হয়ে পড়েছে সীমিত। কিন্তু ভাইরাস ছড়ানো ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)ইতোমধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বৈশ্বিক সতর্কতা জারি করেছে।

বাংলাদেশসহ বেশ দেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে নিয়েছে বা নিচ্ছে। শঙ্কিত কয়েকটি দেশ তাদের সীমান্তে চীনাদের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনকে একদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে পানির মত টাকা খরচ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়ায় অর্থনীতির জন্য তৈরি হচ্ছে অশনি সংকেত। আর সেক্ষেত্রে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকেও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

নভেল করোনাভাইরাস

মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নতুন এক করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। একে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস বা ২০১৯-এনসিওভি।

২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মত একই পরিবারের সদস্য নভেল করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লুর মত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে, ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

বছরের এমন এক সময়ে চীনে এ ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে, যখন চন্দ্রবর্ষের উৎসবে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়ত করে। ফলে ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগও বেড়ে যায় অনেক।

লোক চলাচল সীমিত রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে নববর্ষের ছুটি ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছিল চীন। সেই ছুটি শেষে সোমবার প্রথম কর্মদিবসেই বড় ধাক্কা খায় দেশটির পুঁজিবাজার।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সাংহাই কম্পোজিট সূচক পড়ে যায় আট শতাংশ, এক ধাক্কায় বাজার মূলধন কমে যায় ৩৭০ বিলিয়ন ডলার। 

মুদ্রাবাজারের লেনদেনে চীনের ইউয়ান এখন চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে লোহা, তেল ও তামার দামও পড়ে গেছে। অর্থনীতির এই আতঙ্ক প্রশমনে তারল্য বাড়াতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৭৩.৮ বিলিয়ন ডলার) বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।