যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘পিঠে ছুরি মারা’র অভিযোগ সিরীয় কুর্দিদের

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সামরিক অভিযানের ঘোষণার মুখে সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ‘পিঠে ছুরি মারার’ সামিল বলেই নিন্দা করেছে ক্ষুব্ধ কুর্দিরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2019, 03:43 PM
Updated : 7 Oct 2019, 03:52 PM

সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত থেকে সিরীয় কুর্দি যোদ্ধাদের সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না অভিযোগে গত শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ওই অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন।

তিনি বলেছিলেন, সিরিয়ার ইউফ্রেতিস নদীর পূর্ব দিকে যে কোনো সময় আকাশ ও স্থল অভিযান শুরু করা হতে পারে।

তুরস্কের লক্ষ্য হচ্ছে, সামরিক অভিযানের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকা থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের হটিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া সিরীয় শরণার্থীদের জন্য একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠন করা। যাতে তারা নিজ দেশে ফিরতে পারে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের ওই অভিযানে সমর্থন দিতে কিংবা জড়িত হতে রাজি নয়। ফলে সিরিয়ায় তুরস্কের আসন্ন ওই অভিযান থেকে সরে যেতে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করেছে।

এতে সিরিয়ার ওই অঞ্চলে তুরস্কের অভিযানের পথই সুগম হচ্ছে অভিযোগ করে সিরীয় কুর্দি নেতারা বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের পিঠে ছুরি মেরেছে।”

কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী সিরিয়ায় এখনো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাহিনী। তারা জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করতে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছে। তবে তুরস্ক কুর্দি বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ দল বলেই গণ্য করে।

কুর্দি ওয়াইপিজি মিলিশিয়া নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে সিরিয়ায় আইএস এর বিরুদ্ধে লড়েছে। বর্তমানে তুরস্ক সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি এসডিএফের নিয়ন্ত্রণে। ফলে আইএস সেখানে পরাজিত হওয়ার কারণেও যুক্তরাষ্ট্র আর ওই অঞ্চলে সেনা রাখার কোনো যৌক্তিকতা দেখছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে এক টুইটে বলেছেন, “অন্তহীন ওই যুদ্ধ থেকে সরে যাওয়ার সময় হয়েছে।”

গত অগাস্টে নেটো মিত্র আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরপূর্বে একটি বিশেষ অঞ্চল তৈরি করতে রাজি হয়। যেখান থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়া যাবে। তুরস্কের অভিযোগ, ওয়াশিংটন ওই বিশেষ অঞ্চল গঠনের চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরিয়ার ভেতরে ঠিক কতখানি এলাকা নিয়ে ওই বিশেষ অঞ্চল গঠন করা উচিত এবং কে ওই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়েও এখনো মতপার্থক্য রয়েছে।

আঙ্কারার দাবি, সিরিয়ার ৩০ কিলোমিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত ওই অঞ্চলের সীমানা হবে এবং সেখানে ওয়াইপিজির কোনো যোদ্ধা প্রবেশ করতে পারবে না।

বিবিসি জানায়, তুরস্কের সামরিক অভিযানের ঘোষণার একদিন পরই হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে আঙ্কারার আসন্ন অভিযান থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

বলা হয়, “তুরস্ক শিগগিরই সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে তাদের দীর্ঘ পরিকল্পিত অভিযান শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী ওই অভিযান সমর্থন করে না বা অভিযানে যুক্ত হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যারা ওই অঞ্চলে আইএস খেলাফত ধ্বংস করেছে তারাও ওই এলাকায় আর অবস্থান করবে না।”

গত দুই বছরে কুর্দি বাহিনী সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে আইএস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং আইএস যোদ্ধা সন্দেহে ১২ হাজারের বেশি মানুষকে বন্দি করেছে। যাদের মধ্যে অন্তত চার হাজার বিদেশি নাগরিক।

তুরস্ক যে এলাকায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়তে চাইছে তার দক্ষিণ দিকে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি বন্দি শিবিরে ওই ১২ হাজার বন্দিকে রাখা হয়েছে। তাই আবার যুদ্ধ শুরু হলে সেখানে ঠিক কী অবস্থা হবে তা এখনই অনুমান করা কঠিন।

এমনকী তুর্কি-কুর্দি বাহিনীর যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে আইএস আবারও সেখানে মাথাচাড়া দিতে পারে। তবে পরিণতি যাই হোক, তুরস্ককে এর যাবতীয় দায় নিতে হবে বলেও হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আবারও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠায় ত্রাণকর্মীরা ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন সিরিয়ায় জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান প্যানস মুমজিস।

তিনি বলেন, “অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এর ফল আবারও অসংখ্য মানুষের গৃহহীন হওয়া। তাই আমরা এ পরিণতির জন্য শুধু নিজেদের প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে রাখতে চাই।”