যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার পর মিলবে দুই বছর কাজের সুযোগ

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়া বৈধ অভিবাসী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা শেষ করে দুই বছর সেখানে থেকে কাজের সুযোগ পাবেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2019, 11:12 AM
Updated : 12 Sept 2019, 11:12 AM

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর বিদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে চার মাসের বেশি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতে না পারেন সেজন্য ২০১২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরিজা একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। নতুন এ পরিকল্পনা সেই সিদ্ধান্তকে রহিত করলো।

এই পরিকল্পনার আওতায় সেসব শিক্ষার্থীরা আগামী বছর থেকে যুক্তরাজ্যে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশুনা শুরু করবেন তারা শিক্ষাজীবন শেষে দুবছরের কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।

কিন্তু এ সুযোগ পেতে হলে শিক্ষার্থীদের এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে হবে, যেগুলো নিয়মিতভাবে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলে।

ব্রিটিশ সরকার একই দিনে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সহায়তায় পরিচালিত ইউকে বায়োব্যাংকের অধীনে ২০ কোটি পাউন্ডের একটি জেনেটিক গবেষণা প্রকল্প চালুর ঘোষণা দিয়েছে।  

স্বাস্থ্য বিষয়ক এই দাতব্য গবেষণা সংস্থার কাছে অন্তত ৫ লাখ স্বোচ্ছাসেবী মানুষের জেনেটিক তথ্য ও নমুনা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও রোগ বিষয়ে গবেষণা ও নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বিশ্বজুড়ে গবেষকদের জন্য এ তথ্যভাণ্ডার উন্মুক্ত।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম জেনেটিক গবেষণা প্রকল্পের জন্য সারা বিশ্ব থেকে বিশেষজ্ঞদের জড়ো করছি, যাতে প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসায় উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কার তথা প্রাণ বাঁচানো সহজ হয়।

“বিশ্বের উজ্জ্বল এবং মেধাবীদের জন্য যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা ও কাজের সুবিধা উন্মুক্ত না হলে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। তাই সক্ষমতা চিহ্নিত করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিতে নতুন রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।”

নতুন নীতিমালায় অভিবাসী শিক্ষার্থীরা কি ধরণের কাজ বা কতটি কাজ করতে পারবেন সে বিষয়ে কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না।

বিবিসির মার্ক ইস্টন বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের দুই বছর থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্তই অভিবাসন নিয়ে সরকারের নতুন পদক্ষেপের প্রমাণ।

“অভিবাসনের পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে টেরিজা মে বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। বরিস জনসন সেখান থেকে বেরিয়ে মেধাবী ও সেরাদেরকে বৈশ্বিক ব্রিটেনে এসে বাস করতে উৎসাহিত করছেন।

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ইউনিভার্সিটিজ ইউকে'র প্রধান নির্বাহী অ্যালেস্টার জারভিস বলছেন, এতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি লাভবান হবে; উচ্চশিক্ষার শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে সুনাম ফিরবে।

তিনি বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব বয়ে এনেছে এবং অর্থনীতিতে দুই হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ড যোগ করেছে বলে প্রমাণ আছে। কিন্তু পড়াশুনা শেষে কাজের সুযোগ অনেক দিন ধরে না থাকায় যুক্তরাজ্য এসব শিক্ষার্থীদের টানতে পারছে না।

ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ান অ্যাবোট বলেন, পড়াশুনা শেষে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের পর কাজের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে লেবার পার্টি বরাবরই বলে আসছে। কারণ তারা আমাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণায় অবদান রাখবে। এর ফলে বিশ্বের মেধাবী এবং সেরাদের আনতে পারব আমরা।

“কিন্তু দুঃখজনক যে, আগে এর বিপরীত পদক্ষেপে মন্ত্রীরা সমর্থন দিয়েছিল।”

তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে অভিবাসন বিষয়ে ডানপন্থী রক্ষণশীল সংগঠন মাইগ্রেশন ওয়াচ।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান আলপ মেহমেট বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘পশ্চাৎমুখী’। এর ফলে স্নাতক ডিগ্রিধারী বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সংখ্যায় যুক্তরাজ্যে থেকে যাবে।

“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনিতেই অনেক বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে টানছে। তাই নতুন করে শিক্ষা ভিসার মান কমিয়ে পরোক্ষভাবে এটিকে কাজের ভিসায় পরিণত করার কোনো দরকার নেই।”