চার বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির ‘কিছু প্রতিশ্রুতি’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
Published : 08 May 2019, 01:59 PM
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার এক বছর পর তেহরান এ পদক্ষেপ নিল।
ওয়াশিংটনকে ছাড়াই চুক্তিটি বাঁচাতে বদ্ধপরিকর বাকি বিশ্বশক্তিগুলোকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বুধবার নতুন এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে খবর বিবিসির।
তবে চুক্তিতে দেয়া কোন কোন প্রতিশ্রুতি থেকে তেহরান সরে আসছে তার বিস্তারিত জানাননি তিনি।
পারমাণবিক কর্মসূচি হ্রাস করার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫ সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে ইরান এ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত বছর যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নিলে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।
ইরানের তেল রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিতেও জোর ধাক্কা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানি মুদ্রার মূল্যমান কমতে কমতে রেকর্ড সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে, মূল্যস্ফীতি হয়েছে চারগুণ, হাতছাড়া হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ।
এরপরও ইরান এতদিন ধরে চুক্তিতে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করে আসছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষকরা।
২০১৫ সালে চুক্তির পর থেকে এ সংস্থাই তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
জেসিপিওএ-র ইউরোপীয় অংশীদাররা শুরু থেকেই ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরোধী ছিল। চুক্তিটি বাঁচাতে নানা ধরনের চেষ্টাও করে যাচ্ছে তারা।
এক্ষেত্রে ইরানকে চুক্তিতে করা সব প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিশ্রুতিগুলোকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে বলেও তারা সতর্ক করেছিল।
অন্যদিকে জেসিপিওএ চুক্তির পর ইরান বলেছিল- তাদের ওপর ফের যে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তা ‘প্রতিশ্রুতির পুরোটা কিংবা কিছু অংশ স্থগিত করার কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে’।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে পশ্চিমা সমর্থিত শাহকে উচ্ছেদ করে কট্টর মার্কিনবিরোধী শাসনব্যবস্থার যাত্রা শুরুর পর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা তৈরি হয়।
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকে ওয়াশিংটন তেহরান বিষয়ে কঠোর নীতি নেয়। পরমাণু কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তেহরানের ‘ক্ষতিকর’ কর্মকাণ্ডের লাগাম টানতে মার্কিন প্রশাসন ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুরও আগ্রহ প্রকাশ করে।
গত মাসে ওয়াশিংটনের দুটি সিদ্ধান্ত তেহরানের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে। এর একটি হচ্ছে- ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা।
অন্যটি হচ্ছে- ইরানের তেল কেনার পরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় পাওয়া দেশগুলোর এ সুবিধা তুলে নেওয়া। এ তালিকায় চীন, ভারত ও তুরস্কসহ ইরানি তেলের পাঁচ শীর্ষ ক্রেতা আছে।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের কথাও জানিয়েছে।
ইরানের দিক থেকে ‘বাড়তে থাকা উস্কানিমূলক ইঙ্গিত ও সতর্ক বার্তার’ প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।
তেলের শীর্ষ ক্রেতা দেশগুলোর ওপর থেকে মার্কিন ছাড় প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের তেলবাহী জাহাজগুলোর বেশিরভাগই ওই প্রণালী ব্যবহার করে থাকে।
ইরান ওই প্রণালী বন্ধ করে দিলে তা তেলের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটি এর আগে কখনোই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়নি, এবারও এমনটা ঘটবে না বলেই অনুমান বিশ্লেষকদের।