ইতালিতে উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিক নিখোঁজ

ইতালিতে উত্তর কোরিয়ার একজন কূটনীতিক নিখোঁজ হয়েছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক এমপি।

>>রয়টার্স
Published : 3 Jan 2019, 12:22 PM
Updated : 3 Jan 2019, 02:54 PM

জো সং-গিল নামের এ কূটনীতিক রোমে উত্তর কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ছিলেন। গিল একটি পশ্চিমা দেশে আশ্রয়প্রার্থনা করছিলেন বলে দক্ষিণ কোরিয়ার এক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার নিখোঁজ হওয়ার খবর এল।

গিল গত নভেম্বরের শুরুর দিকে কোনো নোটিশ না দিয়েই দূতাবাস ত্যাগ করার পর সস্ত্রীক উধাও হয়ে যান। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ব্রিফিং পাওয়ার পর সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন দেশটির এমপি কিম মিন-কি।

একইদিনে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘জুংঅং ইলবো’ দৈনিক পত্রিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনৈতিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, জো সং গিল পশ্চিমা একটি দেশে আশ্রয়প্রার্থনা করেছিলেন এবং ইতালি সরকারের সুরক্ষায় তিনি তার পরিবার নিয়ে নিরাপদ জায়গাতেই আছেন।

তবে খবরটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং গিল ইতালিতে আছেন কিনা তাও নিশ্চিত না। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ব্লু হাউজও এর আগে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছে।

২০১৭ সালের অক্টোবরে ইতালিতে উত্তর কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন গিল। জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে ইতালি তৎকালীন উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রদূত মুন জং ন্যামকে বহিস্কার করার পর দায়িত্ব নেন গিল।

তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গতবছর নভেম্বরেই। আর ওই মাসেই তিনি উধাও হন। তখন থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা।

গিল উত্তর কোরিয়ার পক্ষ ত্যাগ করে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন কিনা তাও নিশ্চিত জানা যায়নি। তিনি কোনো দেশের আশ্রয়প্রার্থনা করেছিলেন এমন কোনো রেকর্ডও নেই বলে বিবিসি’কে জানিয়েছে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত হলে উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগী ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকদের তালিকায় নাম যোগ হবে গিলেরও।

উত্তর কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকদের মধ্যে সর্বশেষ পক্ষত্যাগ করেছিলেন ব্রিটেনে দেশটির উপ-রাষ্ট্রদূত থায়ে ইয়ং-হো। ২০১৬ সালে পরিবারশুদ্ধ দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যান এ উত্তর কোরীয় কূটনীতিক।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবাদিকদেরকে ইয়ং হো বলেছেন, তিনি জো সং-গিলের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। গিল ইতালির কোম্পানির মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার বিলাসবহুল পণ্য সরবরাহ করতেন এবং এ কারণে পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক পরিকল্পনা সম্পর্কে তার জানা থাকতে পারে বলেও দাবি হো’য়ের।

ইতালিতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে জাতিসংঘের রোম ভিত্তিক খাদ্য ও কৃষি সংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে। এ সংগঠন উত্তর কোরিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য সরবরাহ করে।

বিদেশে অবস্থান করা উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকরা যাতে পক্ষত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য তাদেরকে দেশে পরিবারের সদস্যদেরকে রেখে আসতে হয়। কিন্তু জো সং-গিল সপরিবারেই রোমে থাকতেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিদেশে থাকা উত্তর কোরীয় কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি থাকার পরও গত কয়েক দশকে কয়েকজন কূটনীতিকের পক্ষত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।

১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে আফ্রিকায় কাজ করা উত্তর কোরিয়ার দুইজন কূটনীতিক কো-ইয়ং হোয়ান এবং হায়ন-সং-ইল পক্ষত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। আর ১৯৯৭ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন মিশরের সাবেক উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রদূত জ্যাং সাং-গিল।

কূটনীতিকদের এ পক্ষত্যাগকে উত্তর কোরিয়া তাদের সরকারকে ক্ষুন্ন করতে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র হিসাবেই দেখে থাকে।

সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একাধিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির সুবাতাস বইতে শুরু করার সময়েই জো সং-গিল উধাওয়ের ঘটনা ঘটল।